সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও রপ্তানিতে
জোর দেয়ার দাবি
সঞ্জু রায়ঃ
উত্তরের সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাটে ১ টাকা থেকে ২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি আর মূলা। বাঁধাকপির দামও নেমেছে ৫ টাকার নিচে। লাভের আশায় একসাথে সবাই জমি থেকে ফসল উত্তোলনের ফলে হাটে হঠাৎ বেড়েছে আমদানি কিন্তু সে তুলনাই নেই আশানুরূপ ক্রেতা। দাম কমায় ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও পরিবহন ব্যয় তুলতে পারছেন না সাধারণ কৃষক।
বৃহস্পতিবার সকালে হাট ঘুরে দেখা যায়, সকালে মানভেদে প্রতিমণ ফুলকপি ১৬০ টাকা অবধি বিক্রি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথেই তা নেমে যায় মাত্র ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকাতে তারপরেও নেই আশানুরূপ ক্রেতা।
শুধু ফুলকপি নয় একই অবস্থা মুলা ও বাঁধাকপির দামের ক্ষেত্রেও। গেলো কয়েক দিন হলেই দাম নেমেছে ৫ টাকার নিচে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও পরিবহন ব্যয়ও তুলতে পারছেন না কৃষকরা, অনেকে আবার অভিমানে বিক্রি না করেই ফুলকপি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।
হাঁটে ফুলকপি বিক্রি করতে আসা শিবগঞ্জের কৃষক ইমান আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে আগাম সবজি হিসেবে এবার ফুলকপি আর মূলাতে ভালো মুনাফা করেছে তারা তারপরেও সেটি খুব বেশি নয়। তবে এখন একেবারেই লোকশান গুনতে হচ্ছে । জমি থেকে ফুলকপি তুলে হাট পর্যন্ত আনতে গাড়ি ভাড়ার টাকাটাও তোলা যাচ্ছে না।
আক্ষেপের সাথে একই রকম নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করেন মোফাজ্জল হোসেন নামের আরেক দরিদ্র কৃষক। বলেন, সকালের দিকে বগুড়ার বাইরের জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীরা তাও ফুলকপির সর্বোচ্চ ২ টাকা কেজি দিলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথেই কেউ আর দামই বলেন না। তারা দাম না পেলেও সারাবছর খুচরা বাজারে কিন্ত ভোক্তাদের বেশি দামেই খেতে হয় সবজি। অভিমানী সুরে তাইতো তাদের অভিযোগ রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তারা ফসল ফলালেও সাপ্লাই চেইন ঠিক না থাকায় মুনাফার সিংহভাগ ঢুকে যায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটে যা সমাধান না করলে কৃষক বাঁচবে না।
তবে হাটে স্বাভাবিক রয়েছে আলু ও বেগুনের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৪০ ও ২০ টাকা প্রতি কেজি। তারপরেও মধ্যসত্ব ব্যবসায়ীদের টানাপোড়নে লাভ করা যেন হিমশিম হয়ে উঠেছে কৃষক ও পাইকারদের। সরকারের কাছে দাবি জানান সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণের পাশাপাশি রপ্তানির ব্যবস্থা করা।
এদিকে কৃষককে বাঁচিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার দাবি জানান সাধারণ ক্রেতারাও। কখনো খুব বেশি আবার কখনো বা দাম একদম তলানিতে এমন পরিস্থিতির উত্তরন চান তারা। বগুড়া শহরের কলোনী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সালাম বলেন, মহাস্থান হাটে অল্প দামে সবজি পেলেও এর সাথে যুক্ত হয় হাটের ইজারা আর পরিবহন খরচ। তাদেরও পেট রয়েছে তাইতো সবমিলিয়ে প্রতিকেজিতে তাদেরকেও ৫ থেকে ৭ টাকা লাভ করতে হয়। তবে দাম কম হলেও ব্যবসাতে লাভের মুখ দেখছেন না বলে অভিযোগ তাদেরও। তাদের বক্তব্য জিনিসের দাম কমলে তার বিক্রিও কমে যায়। কৃষককে বাঁচিয়ে বাজার স্থিতিশীল করতে করণীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান তাদের।
দামের এমন ঊথান পতনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসমত জাহান বলেন, অধিকাংশ কৃষক একসাথে একই ফসল রোপণ করলে চাহিদার তুলনায় অধিক উৎপাদন হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা মোকাবেলায় কৃষকদের ফসল রোপণের সময় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এছাড়াও সবজি উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা হিসেবে বগুড়ায় একটি সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ সময়ের দাবি যে বিষয়ে এর আগে সরকারিভাবে উদ্যোগও নেয়া হয়েছিলো। যদি এটি নির্মাণ করা যায় তাহলে বাজারের এমন টালমাটাল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। পাশাপাশি বর্হিবিশ্বে সাধারণ মানুষ অধিক দামে সবজি কিনে খায় অথচ আমরা এখনো রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে আছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবজি যদি রপ্তানির দিকে জোর দেয়া যায় তাহলে একদিকে যেমন বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব অন্যদিকে সারা বছর বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব আয় করা সম্ভব বৈদিশিক মুদ্রাও।