মানুষের আত্মা গুনাহপ্রবণ। তাই গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক। আবার শয়তানের প্ররোচনায়ও মানুষ গুনাহ করতে পারে। এসবের বিপরীতে যারা কোরআন-সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে অথবা গুনাহ করে ফেললে তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজে পরিশুদ্ধ করে নেয়, তাদের পুরস্কার হলো জান্নাত; আর যারা গুনাহে ডুবে থাকে এবং গুনাহের জন্য তাওবা-ইস্তেগফার করে না, তারা পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো- বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮) আরও ইরশাদ হয়েছে ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান: ৭০)
কেউ গুনাহের পর তার অপরাধ বুঝতে পারলে তার প্রতি সহনশীল হওয়া উচিত। কখনো খোঁটা দিয়ে তাকে তার পূর্বের গুনাহের জন্য লজ্জিত করা উচিত নয়। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
হাদিস শরিফে মহানবী (স.) মানুষের দোষ-ত্রুটির পেছনে পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। (তিরমিজি: ২০৩২)
তাছাড়া মানুষকে লজ্জা দেওয়া বা তুচ্ছ করা মুমিনের কাজ নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির মন্দ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৩)
বিদ্রূপকারীরা পরকালে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করবে। পবিত্র কোরআনে এ স্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাতে কাউকেও বলতে না হয়, হায় আফসোস! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য! আর আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’ (সুরা জুমার: ৫৬)
সবচেয়ে বড় কথা হলো- যাকে পূর্বের গুনাহের জন্য খোঁটা দিচ্ছেন, সে যদি ওই গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত বিপদে পড়বেন। কারণ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে তওবা করে, সে নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায়।’ (ইবনু মাজাহ: ৪২৫০; মিশকাত: ২৩৬৩)
ওই গুনাহমুক্ত ব্যক্তিকেই যদি আপনি আগের কোনো গুনাহের কারণে খোঁটা দেন, তাহলে বিষয়টি হয়ে যাবে অপবাদ। অপবাদের গুনাহ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩)
আসলে মুমিনকে কথাবার্তায় সতর্ক থাকতে হয়। আবু আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তাআলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মালিক: ২৬৫; আহমদ: ১৫৮৫২; তিরমিজি: ২৩১৯; ইবনে মাজাহ: ৩৯৬৯; ইবনে হিব্বান: ২৮০; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৮৮৮)
অতএব, কেউ যদি নিজের গুনাহ নিয়ে লজ্জিত হয়, তাকে হেয় করা যাবে না। বরং সে যেন তওবার ওপর অটল থাকতে পারে এ বিষয়ে তার সহযোগী হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।