প্রতারণার কৌশল হিসেবে সংবাদ সম্মেলনকে ব্যবহারের অভিযোগ

কামরুল হাসান   টাংগাইল পতিনিধিঃ টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, প্রতারণার কৌশল, সত্যের অপালাপ ও প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস বলে অভিহিত করেছেন কালিহিাতী উপজেলা যুব দলের সদস্য সচিব হাসমত আলী রেজা। গত বুধবার(১৯ মার্চ) কালিহাতী উপজেলার মালতি গ্রামের শাহজাহান তালুকদারের ছেলে মো. আশিকুর রহমান তালুকদার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সৌদি আরবের একটি ভিসা ব্যবসার কোম্পানীতে কাজ করতেন এবং বর্তমানে ম্যানপাওয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রবাসী মো. আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ মূলত: ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন দেশের ভিসা কেনা-বেঁচা করেন। এলাকার সূত্রে তার গ্রামের আমিনুর ইসলাম রুবেল ও কালিহাতী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব হাসমত আলী রেজার সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। পরে তারা তিন জন ভিসা কেনা-বেঁচার ব্যবসা শুরু করেন।
 স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুবদল নেতা হাসমত আলী রেজাকে ১৪টি ভিসা দেওয়ার বিপরীতে মো. আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু জাল ভিসা প্রদান ও তার দেওয়া ভিসায় বিদেশে গিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হওয়ার কারণে অনেকেই তাদের দেওয়া টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে মো. আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ, তার বন্ধু আমিনুর ইসলাম রুবেল ও যুবদল নেতা হাসমত আলী রেজার সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
 ওই টাকা উদ্ধারের জন্য হাসমত আলী রেজা মালতী গ্রামের ভিসা ব্যবসায়ী মো. আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজের নামে ২০২৩ সালের ২৯ আগষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। বর্তমান মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। আশিকুর রহমান সবুজও টাকার দাবিতে হাসমত আলী রেজার নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় হাসমত আরী রেজা জামিনে রয়েছেন।বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ৬-৭ দফায় গ্রাম্য সালিশ করা হয়েছে। সালিশে গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও অংশ নেন। সালিশের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে তারা মেনে নিলেও পরে অস্বীকার করে আবারও মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করে চরিত্র হনন সহ নানা সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
 সর্বশেষ যুবদল নেতা হাসমত আলী রেজার কাছ থেকে নেওয়া ওই টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় সেজন্য হাসমত আলী রেজাকে অভিযুক্ত করে গত বুধবার (১৯ মার্চ) মিথ্যে তথ্য দিয়ে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেন আশিকুর রহমান তালুকদার। ওই সংবাদ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য যুবদল নেতাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা ও তার কাছ থেকে নেওয়া টাকা আত্মসাত করার কৌশল মাত্র। এসব দাবি করেছেন কালিহাতী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব হাসমত আলী রেজা।
 তিনি জানান, বিগত ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ‘আশিক বিজনেস ডিল’ নামক একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে হাসমত আলী রেজাকে সৌদি আরবের ভিসা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ভিসার টাকা লেনদেনের জন্য হাসমত আলী রেজাকে আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের দুটি সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর দেন।
 হাসমত আলী রেজা ‘আশিক বিজনেস ডিল’ নামক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের স্বত্ত্বাধিকারী আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজের দেওয়া জনতা ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব (০১০০১৪৪৬০৪৬৪৯) নম্বরে ২০২২ সালের ১৯ মে ২ লাখ টাকা, ২১ জুলাই ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, ২৫ আগষ্ট ৯৬ হাজার টাকা, পরবর্তীতে আরও ২ লাখ টাকা এবং প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব (২১২৫২১১০২৫৬৫০) নম্বরে একই সালের ৩০ মে ৪ লাখ, ৫ জুন ৩ লাখ, ৯ জুন ৩ লাখ, ২৩ জুন ৩ লাখ এবং ২৮ জুন ৬ লাখ টাকা (মোট ২৫ লাখ ৯১ হাজার) প্রেরণ করেন।
 পরে আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ দেশে এলে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অনেক সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তাকে নগদ ৬ লাখ ৪৬ হাজার, ১০ এপ্রিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা প্রদান করেন। তার চাহিদা অনুযায়ী ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেওয়ার পর সৌদি আরবের ভিসা চাইলে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ৬ জুন ঢাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পল্টন কার্যালয়ে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ২০ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে ভিসা দিবে অন্যথায় হাসমত আলী রেজার কাছ থেকে নেওয়া ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
 আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ জানান, হাসমত আলী রেজাকে ১৩টি রিকডিং লাইসেন্সের নম্বরের বিপরীতে তিনি ৩ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১১৯টি ভিসা পাঠান। ভিসার বিপরীতে মোট টাকার মধ্যে ৫৮ লাখ টাকা হাসমত আলী রেজা তাকে পাঠান। বাকি টাকা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকেন। কিন্তু তারা পাওনা টাকা পরিশোধ করতে গড়িমসি করেন।
কালিহাতী উপজেলা সদস্য সচিব হাসমত আলী রেজা জানান, সৌদি আরবের ১৪টি ভিসা দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নিয়ে আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করিয়েও ভিসা দিতে পারেনি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে আজ-কাল-পরশু করে কালক্ষেপণ করছে। পরে তার নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এই মামলায় তিনিকারাগারেও ছিলেন। এছাড়া ঢাকায় তার নামে মানব পাচার আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আশিকুর রহমান তালুকদার সবুজ তার টাকা ফেরত দেয়নি এবং তার দায়েরকৃত মামলায় তাকে জেল-হাজতে যেতে হয়েছে। সেই ক্ষোভে তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তাকে হেয় করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারই অংশ হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
preload imagepreload image