মির্জা আব্বাস আলি। পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হয়েছিল এ অভিনেতার। কলেজে পড়াকালীন ১৯৯৪ সাল থেকে মডেলিং শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে এসে তিনি তামিল চলচ্চিত্র ‘কাধাল দেশম’ দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, যা বাণিজ্যিক সাফল্য পায়। সেই সঙ্গে ফিল্মিবোদ্ধদেরও মন জয় করে নেন। কারণ এ সময়টা ছিল তামিল চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়। রজনীকান্ত ও কমল হাসানের মতো তারকারা তখন চল্লিশের কোঠায়, ‘তরুণ’ হার্টথ্রব নায়কের চরিত্রে তাদের গ্রহণযোগ্য কম ছিল। সে কারণে বিজয়, অজিত কুমার, অরবিন্দ স্বামী এবং আর মাধবনসহ নতুন প্রজন্মের তারকাদের উত্থান ঘটে। আর এ সময় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আব্বাস ‘হার্টথ্রব’ নায়ক বলে ডাক নাম ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি স্টার হয়ে যান এ অভিনেতা। এরপর তার ঝুলিতে পরিচালক-প্রযোজকদের কাছ থেকে আসতে থাকে একের পর এক ছবির অফার।
আব্বাস শুরু করলেন ক্যারিয়ারের ব্যস্ত সময়। তেলেগু ভাষায় প্রিয়া ও প্রিয়া, রাজা এবং তামিল ভাষায় কান্নেঝুথি পোট্টুম থোট্টু, পাদায়াপ্পা এবং সুয়াম্বরমের মতো ছবিতে অভিনয় করে ফেললেন। রাহুল রায়ের মতো ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’ ছিলেন না বঙ্গভূমে জন্ম নেওয়া এ অভিনেতা। কিন্তু এসব ছবিই দক্ষিণের বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল।
অভিনেতা কমল হাসান ও শাহরুখ খান অভিনীত ‘হে রাম’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করার পর আব্বাস কান্ডুকোন্ডেইন কান্ডুকোন্ডেইনের সঙ্গে তার সবচেয়ে বড় ব্রেক পান। আর এই রোমান্টিক ছবিতে তিনি সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। আর সেখানে মামুট্টি, অজিত কুমার ও টাবুও ছিলেন ছবির অন্যতম চরিত্র।
২০০০-এর মাঝামাঝি সময়ে আব্বাসকে তামিল চলচ্চিত্রের অন্যতম ভরসাযোগ্য অভিনেতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ২০০২ সালে ‘অংশ’ ছবির মাধ্যমে আব্বাস আলি বলিউডে পা রাখলেও সেই ছবি বক্স অফিসে সাফলের মুখ দেখেনি।
তবে ২০০৬ সালের দিকে হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের কারণে আব্বাস বেশ কয়েকটি তামিল চলচ্চিত্র ছেড়েছিলেন। কিন্তু তার দুটি হিন্দি ছবি ‘অংশ’ ও অউর বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তিনি যে অন্যান্য ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সেসবও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আচমকাই আব্বাসের স্বর্ণযুগ ক্যারিয়ার থমকে যায়।
শুরু হয় আব্বাস আলির নতুন ক্যারিয়ার। তামিল ও তেলেগু ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তার চেয়ে কম জনপ্রিয় অভিনেতাদের পাশে দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে আব্বাসকে তেলেগু চলচ্চিত্রে ক্যামিও ও সহায়ক অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আর সেই স্টারডম ফিরে পাননি। শেষে ২০১১ সালের পর ফিল্মি ক্যারিয়ারের পতনের বোঝা নিয়েই টেলিভিশন শোতে কাজ শুরু করেন এ অভিনেতা।
এরপর মির্জা আব্বাস আলি সবকিছু ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে চলে যান। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে সব অর্থ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর ছোটখাটো চাকরি করতে হয় একসময় দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির পর্দা কাঁপানো এ তারকাকে। রেডনুলিন ২০২২-এ এক সাক্ষাত্কারে এ অভিনেতা বলেন, একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করা থেকে মেকানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া— এমনকি বছরের পর বছর সেখানে একটি পেট্রোলপাম্পেও কাজ করেছেন তিনি।
অবশেষে মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে ওঠেন আব্বাস। ২০২৩ সালে ভারতে ফিরে আবার অভিনয়ে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে এখনো নতুন কোনো প্রজেক্টে চুক্তিবদ্ধ হননি এ অভিনেতা। পরিবারের সঙ্গে চেন্নাইয়ে থাকেন মির্জা আব্বাস।