৯০ শতাংশ শিশু ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে
সঞ্জু রায়:
শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যাদের মাঝে অধিকাংশই বৃদ্ধ ও শিশুরোগী। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গড়ে ৯০ শতাংশ শিশুই ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। এদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যয়ের কথা বিবেচনায় মানুষের ভরসা যখন বাড়ছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে তখন চিকিৎসায় সন্তুষ্টি জানালেও আক্ষেপ ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকা নিয়ে।
গেলো কয়েক দিন হলেই উত্তরের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ায় বইতে শুরু করা হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। কখনো গরম আবার রাতে কখনো বা হিমশীতল ঠান্ডা সব মিলিয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়তেও শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
হাসপাতালে আসা অধিকাংশই নিউমোনিয়া, এজমা, টনসিল, শ্বাসকষ্ট কিংবা ঠান্ডাজনিত এলার্জিতে ভুক্তভোগী রোগী। অন্যদিকে একদিনে গড়ে ৯০ শতাংশ শিশুই ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বগুড়ায় বর্তমানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৬৮ জন আর ৮’শ রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে সক্ষম শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ধারন ক্ষমতার দ্বিগুণ প্রায় ১৬’শ জন রোগী।
সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রাশেদুল ইসলাম রনির সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তবে শিশু ওয়ার্ডে এই ভীড় কিছুটা বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৩০জন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হলেও দেখা যায় তার মাঝে ২৪ থেকে ২৫ জনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই চিকিৎসক জানান, শিশুদের ডায়রিয়া হলেই তারা পানি শূন্যতায় ভোগে কিন্তু অনেকে না বুঝেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বাড়িতেই ভুল চিকিৎসা প্রদান করে যাতে আরো শিশুদের ক্ষতি হয়ে যায়।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভরসা যখন সরকারি হাসপাতালগুলো তখন চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট হলেও রোগী ও তাদের স্বজনদের আক্ষেপ পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকা নিয়ে।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর রহিম নামের এক মুদী ব্যবসায়ী জানান, বগুড়া উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র হলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে আমরা চিকিৎসা সেবায় এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছে। চিকিৎসার মান অনেক ভালো হলেও এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের ছুটতে হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিকে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এত বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের মত জায়গায় আজও স্থাপন করা যায় নিয়ে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। এখনো এই হাসপাতালে এনালগ পদ্ধতিতে এক্সরে রিপোর্ট দেয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পাশাপাশি রক্তের অনেক পরীক্ষাও করা যায় না এই হাসপাতালে।
প্রায় একই রকম আক্ষেপ জানালেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রিক্সাচালক আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, শুধু স্থানীয়রায় বগুড়ায় চিকিৎসা নিতে আসেন না এখানে আসেন আশেপাশের কয়েক জেলার লাখো মানুষ। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে মেডিকেলে যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি রয়েছে তা অপ্রতুল। অনেক সময় দীর্ঘ লাইন দিয়েও সরকারি ফিসে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না মেডিকেলে। ছুটতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে যেখানে একপ্রকার গলাকাটা দাম রাখা হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষায়।
আর এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা বলছেন, শীতের এই সময় রোগীদের চাপ অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতলে কিছু কিছু ওষুধের সরবরাহ বর্তমানে নেই যা পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হবে। তবে চিকিৎসা সেবায় তাদের পক্ষ থেকে কোন ত্রুটি নেই। আর হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বশীলরা চাইলে দ্রুতই হাসপাতলে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা সম্ভব হবে যেখানে তারা প্রথমেই ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
অন্যদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বগুড়া শজিমেকে বরাবরই ১৮’শ থেকে ১৯’শ রোগী ভর্তি থাকে যা হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি। তারপরেও সকল প্রতিবন্ধকতা কে উপেক্ষা করে তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন বর্তমানে শজিমেকে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে আছে বা ঘাটতি রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। ধীরে ধীরে সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়াও শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে তিনি সাধারণ মানুষকে সচেতন ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের অভ্যাস গড়ার পরামর্শ দেন।