বাগমারায় ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ,হুমকির মুখে পরিবেশ ও ফসলী জমি

নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
দীর্ঘদিন ধরে চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষি জমি নষ্ট করে চলছে তাদের এ ইটভাটা কার্যক্রম। তবে ইট উৎপাদনে ইতিমধ্যে সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছেন ভাটা ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ভাটাগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে দুই চালান ইট বের করে দের্দাচ্ছে বিক্রি করে যাচ্ছেন ভাটা ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সুত্রজানান,এসব ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয় তাদের। এছাড়া ভাটা গুলোর পাশে রয়েছে ফলের বাগান,আলু সরিষা,গম,ভট্রা ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী,আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো এসব ইটভাটা থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকা মাসোহারা। ফলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। এদিকে,উপজেলা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তবে এসব ইটভাটা মালিকরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন নিয়ম মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই বাগমারা অঞ্চলে গড়ে উঠেছে রামরামার অরঙ্গবাদ এলাকায় সোবানের ভাটা,রামরামার থান্দারপাড়ায় জামালের ভাটা,তাতিপাড়া বারনই নদির ধারে আব্দুস সালাম মন্দলের ভাটা,কামারখালীতে আবুল কালাম আজাদের দুইটি ভাটা ও কামারখালী পালপাড়ায় হাবিবুর রহমানের ভাটাসহ বাগমারা উপজেলা জুড়ে পায় অর্ধশতাধিক ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ। এবং অধিকাংশ ইটভাটায় আবার জনবসতির খুব কাছাকাছি। ফলে এসব ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হচ্ছে,তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরুপ প্রভাব। তাছাড়া একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে দিন দিন। ভাটা মালিকদের অভিযোগ, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তাই চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটা। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০ লাখ ইটের বিপরীতে প্রায় চার লাখ টাকা রাজস্বও দিতে হচ্ছে সরকারকে। ভাটা মালিকেরা বলছেন,আইন অনুযায়ী কৃষি জমি,আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একই সাথে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাটা
স্থাপন করেছি। তারা জানান, ভাটাগুলোর বৈধকাগজ না থাকার কারণে প্রশাসন ঝামেলা করছে। তাদের অনেক টাকাও দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বলেন, সরকার অনুমোদিত যে চারটি পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো বা প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে, তা খুবই ব্যয় বহুল। এ কারণে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে একটি জেলার সব মালিক বা উদ্যোক্তারা এক হয়ে একটি বা দুটি ভাটা তৈরি করলেও এর সমাধান হতে পারে। বাগমারায় এত বেশি ভাটারও তো প্রয়োজন হয় নাই। এ জন্য ভাটা মালিকদের কড়া নজরদারির মধ্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি। ইটভাটা মালিকরা বলছেন,পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির জন্য সরকার সহায়তায় এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি বলছেন,বিদ্যমান আইনের জটিলতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। তবে নানা কারণে প্রভাবশালীরা অনুমোদন না নিয়েই ইটভাটা তৈরি করেছেন।