‘রাজকীয় দল’ গঠনের চেষ্টা করছে গোয়েন্দা সংস্থা: রুহুল কবির রিজভী

রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি ‘রাজকীয় দল’ গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকরা নাকি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য কাউকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এই ঘটনা এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’ তবে কোন গোয়েন্দা সংস্থা দল গঠনের চেষ্টা করছে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের একটি সমিতি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। রিজভী বলেন, একটা দল করার নাকি চেষ্টা করা হচ্ছে, কিং পার্টি যেটাকে বলা হয়। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা যে চেষ্টা করেছেন, শেখ হাসিনা গোয়েন্দাদেরকে দিয়ে যে কাজ করেছেন, এখনো তো আমরা সেটা শুনছি।

তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে বলছে যে, অমুক লোকের সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করুন। তারা এটা তো করতে পারে না। এজন্য এতো মানুষ আত্মদান (গণঅভ্যুত্থান) করেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে কারা কারা নির্বাচিত হবেন, কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন তা যদি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কি সার্থকতা থাকল?’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনাও একই কাজ করেছেন। উনি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বিরোধী দলের লোকজনকে ধমক দিতেন। চেষ্টা করতেন বিএনপি থেকে যেন তাদের (নেতাকর্মী) সরিয়ে দেওয়া যায়, তারা যেন আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে, যেন বিএনপিকে ভাঙে। এই কাজটা ১৬/১৭ বছর শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যে মানুষ যে রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে তাকে তারা ভোট দেবে। যে মানুষ যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় তারা সেভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করবে। এখানে কোনো নির্দেশনা, কোনো হুমকি, রাষ্ট্রের কোনো খবরদারি থাকবে না-এটাই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেটা না করে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মতো, শেখ হাসিনার মতো একই কালচার, একই সংস্কৃতি যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো মানুষ মনে করবে আরেকটি ফ্যাসিবাদ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। এটা হতে দেওয়া যেতে পারে না।’

সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বুধবার আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়ে পাঠিয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই নথি চাওয়ার পরেই গভীর রাতে এই আগুন। এটা জনগণের মধ্যে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে একেবারে উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের কিছু নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে অনেক নথি পুড়ে যাওয়া এবং সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে, মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চারদিকে বিভিন্ন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত, ব্যক্তিগত ভয়ের কিছু নয়, রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের ভয়। আমরা এর আগে দেখেছি, যখন কোনো সচিব বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসে তখনই সচিবালয়ে ফাইল গায়েব হয়ে যায়, সচিবালয়ের ভেতরে আগুন ধরে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘একটা নতুন আইন পাশ করা হয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪। এটা কারা পাশ করেছেন? অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেছেন এই ধরনের উপদেষ্টারা, ছাত্র নেতারা যারা জুলাই আন্দোলনে ছিলেন। আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয় তাদের হাত দিয়ে কি করে এই বিপজ্জনক আইনটি পাশ করা হলো। এই আইনে এজেন্সি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্পষ্ট ও বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করেছে। এটা তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক্সটেনশন বলে মনে হচ্ছে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে যারা সরকারে আছে তাদেরকে দেশের জনগণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কি? জনগণের কল্যাণে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন। উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে কমেন্ট করার কী দরকার। তারা কি প্রতিপক্ষ হবে? আমরা তো তাদের প্রতিপক্ষ মনে করি না। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ হওয়ার যোগ্যও না। আমরা রাজনীতি করি, তারা তো রাজনীতিই করে না।’

অ্যাডভোকেট বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, সৈয়দ শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, রমেশ দত্তসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতারা বক্তব্য দেন।