অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বেগম রোকেয়ার সাহস ও কল্পনাশক্তি আমাকে অবাক করেছে, এখনো করে। এই কল্পনাশক্তি আমাদের সবার আছে। কিন্তু আমরা বেগম রোকেয়ার মতো তা ব্যবহার করতে পারছি না।
তিনি বলেন, কী পরিস্থিতিতে তিনি বড় হয়েছেন সেটা সবার জানা, আজকের তুলনায় তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। লেখাপড়ার সুযোগটা তিনি কীভাবে পেয়েছেন, কত কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন, তার মধ্য দিয়েই তিনি এক প্রতিবাদী তরুণী, প্রতিবাদী বালিকা, প্রতিবাদী মহিলা হয়ে উঠে আসছেন।
সোমবার বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্ম ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, বেগম রোকেয়ার কল্পনাশক্তি আমাকে অবাক করে। কল্পনাতে কিন্তু কারও বাধা নাই। বলতে পারবেন না যে, এখানে সরকার আমাকে বাধা দিয়েছে বা পরিবার বাধা দিয়েছে। এখানে কোনো বাধা নেই। কল্পনাশক্তি মানুষের সব শক্তির ঊর্ধ্বে। এটাতে কোনো পয়সা খরচ নেই, কোনো আয়োজন নেই, শুধু মনটাকে ছেড়ে দেওয়া এবং বেগম রোকেয়া সেটা করেছেন তা সুলতানার স্বপ্নে ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, এই বিজয়ের মাসে বড় একটা সৌভাগ্য আমাদের যে, বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করতে পারছি। এই স্মরণের একটা যথোপযুক্ত পদ্ধতিও আমরা অনুসরণ করছি। তার স্মরণে পদকটা তাদের দেওয়া যারা বেগম রোকেয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজ আমরা সৌভাগ্যবান এই পদকের মাধ্যমে বেগম রোকেয়াকে স্মরণ এবং তার ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পেরে। যারা পদক পেলেন, এটা তার কোনো সাম্প্রতিক কাজকর্মের জন্য না। সারা জীবনের যে কর্তব্যবোধ এবং অনুপ্রেরণা নিজের জীবনে ব্যক্ত করেছেন এবং দেশের সবার কাছে আদর্শ হিসেবে ধরেছেন, তাদের জন্য এ সম্মাননা।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা ছোটবেলায় অষ্টম শ্রেণিতে বেগম রোকেয়া সম্পর্কে কিছু পড়েছিলাম। কেন পড়ানো হচ্ছিল তখন তত বুঝিনি। কিন্তু যতই ওপরের শ্রেণিতে গেছি এই নাম বারেবারে ফিরে এসেছে এবং অবাক হয়েছি তার কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা দেখে। তখন যারা পাঠ্যবই প্রণয়ন করেছিলেন, তাদের মাথায় যে চিন্তা ছিল বেগম রোকেয়ার কথা বইয়ের মধ্যে দিলে কাজে লাগবে, তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আজ যারা পাঠ্যবই রচনা করেন তাদের আহ্বান জানাচ্ছি এরকম কতজনের নাম, এই চিন্তার বীজ ছোটবেলার বইয়ের মধ্যে দিচ্ছেন তা চিন্তা করার জন্য। কারণ এর মাধ্যমেই উঠে আসবে নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা।
উল্লেখ্য, সমাজ, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য চার জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৪’ তুলে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেগম রোকেয়া পদক-২০২৪ যারা পেয়েছেন তারা হলেন- শিক্ষাবিদ পারভীন হাসান। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চেয়ারপারসন এবং সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভিসি। শ্রমিক, নারী অধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার। দাবাড়ু এবং দেশের প্রথম নারী আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার রাণী হামিদ এবং নারী অধিকার সংগঠন নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন পারভীন হক।