সালাম অর্থ শান্তি, কল্যাণ কামনা ইত্যাদি। সালাম ইসলামি অভিবাদন; পাশাপাশি এটি একটি দোয়াও। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার রহমতের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী যে প্রথমে সালাম প্রদান করে’।
সালাম দেওয়া সুন্নত এবং সালামের জবাবে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’ বলা ওয়াজিব। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সালাম এক অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়। একইসঙ্গে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ করা হয়। ফলে ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় হয়; হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়।
সাক্ষাতে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলাকেই সাধারণত আমরা সালাম হিসেবে চিনি। আরো দীর্ঘ করেও সালাম দেওয়ার নিয়ম রয়েছে ইসলামে। যেমন আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আরো দীর্ঘ করে বললে আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
আসসালামু আলাইকুম السَّلَامُ عَلَيْكُمْ অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সঙ্গে ওয়ারাহমাতুল্লাহ وَرَحْمَةُ اللهِ যোগ করলে অর্থ হবে আপনার ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। এর সঙ্গে وَبَرَكَاتُهُ যোগ করলে অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ বললে অর্থ হবে আপনার ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
আরো পড়ুন >>> আল্লাহর ৯৯ নাম ও তার অর্থ (পর্ব- ১)
হাদিস অনুযায়ী প্রত্যেক বাড়তি অংশের জন্য ১০ নেকি করে যোগ হবে। হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। নবীজি (সা.) বললেন, ১০ নেকি। তারপর অন্য এক লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। নবীজি (সা.) বললেন, ২০। অতঃপর আরেক লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবীজি (সা.) বললেন, ৩০। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৫৩; তিরমিজি: ২৬৮৯)
সালাম বা দোয়ার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا
অর্থ: ‘আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৮৬)
সালামের উত্তরদাতার জন্য কোরআন ও হাদিসে প্রশংসা রয়েছে এবং সালামদাতার সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি শব্দ দ্বারা জবাব দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সাওয়াবের কোনো পরিমাণ উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
যে আগে সালাম দেয়, তাকে উত্তম বলা হয়েছে হাদিসে। আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ: ৫১৯৭)
সালামদাতা নিকটে থাকলে তাকে শুনিয়ে জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য সালামদাতা যদি বধির হয় কিংবা দূরে থাকে তাহলে মুখে উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ইশারার মাধ্যমেও জবাবের কথা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। (বুখারি: ৬২২৭; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৪১৩; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩৩৩; আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/১৮; আরফুশ শাজি: ৪/১৪২)
মুমিন মুসলমান মানেই সালামের আমল। ইসলামের যতগুলো সুন্দর দিক আছে, যতগুলো সৌন্দর্য্য ইসলামকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করেছে, তার অন্যতম একটি হলো সালাম। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, ইসলামের কোন আমল সুন্দর বা সর্বোত্তম? জবাবে শন্তির বার্তাবাহক রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অভাবীদের পানাহার করানো, আর পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া’। (আবু দাউদ- ৫১৯৬)
বুখারি শরিফের অন্য এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে, ‘তিনটি জিনিস যে ব্যক্তি একত্রিত করতে পারবে সে ঈমান একত্রিত করল, (১) নিজের ব্যাপারেও ইনসাফ করা, (২) জগতের সবাইকে সালাম দেওয়া, আর (৩) অল্প সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তা থেকে ব্যয় করা’।
ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহর মাঝে সালামের প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।