ময়মনসিংহে বন্যায় ধানে-মাছে ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা

অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। এই দুই খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা কৃষকেরা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের সহযোগিতার লক্ষ্যে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সম্প্রতি বন্যায় তিন উপজেলার ৩১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার।

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, তিন উপজেলার ২৬ ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৯৪৬টি পুকুরের ৪ হাজার ৪৬৫ টন মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২ কোটি ১২ লাখ মাছের পোনা ভেসে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। মোট ক্ষয়ক্ষতি ৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সম্প্রতি বন্যায় তলিয়েছে ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের ডৌমঘাটা গ্রামের কৃষক কবির সারোয়ার সুজনের ৪০ একর ফিশারির মাছ ও দেড় শ একর ফসলের ধান। তিনি বলেন, ‘১৯৮৭ সালের পর এমন বন্যা এই এলাকার মানুষ কখনো দেখেনি। ৪০ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি, সেই সঙ্গে ধানও। কখনো ভাবতে পারিনি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন জানান, তিনি ২০ কাঠা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। প্রতি কাঠায় ৬০০ করে টাকা খরচ হয়েছে। আর এক মাস পরেই ধান পাকতে শুরু করত। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে তাঁর।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার কথা জানিয়ে ফুলপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল হাসান কামু বলেন, কৃষকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। এখন সরিষা, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। ফসলের বীজ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু বলেন, বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের সহযোগিতার লক্ষ্যে পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছি। সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’