ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজিতে ঈশ্বরদী বাজার ভরপুর। দোকানগুলোতে শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতা। ১৫ দিনের ব্যবধানে হাতেগোনা দুয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, সবজিতে বাজারের উত্তাপ আরও কমে আসবে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঈশ্বরদীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
তবে সবজির দাম আরো কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় শংকিত কৃষক। বাজারের চাহিদা যাচাই ও সময় না বুঝে আবাদ করলে কৃষকদের ক্ষতি হয় বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
ঈশ্বরদীর কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে ৩০০ টাকার শিম দাম কমে হয়েছে ৩০ টাকা, ৮০ টাকা কেজির ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা, বাঁধা কপি ২০ টাকা, লাউ ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৭০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলুর কেজি ৫৫-৬০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমেছে অস্বাভাবিক। মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা কেজি। বেগুনের ক্ষেতে পোকা বা সাদা মাছির আক্রমণ হওয়ায় খুচরায় বেগুন ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম কমে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। রসুনের দাম না কমলেও আদার দাম কমে হয়েছে ১০০ টাকা।
গ্রীস্মকালীন সবজি করলা ও পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাকের আঁটি ২০ টাকা, মুলা শাক ৫ টাকা, পালং শাক ৮ টাকা, কলমি শাক ৬ টাকা, পুঁই শাক ১৫ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির সরবরাহ বাড়ছে, দাম আরও কমে আসবে। সবজি বিক্রেতা ইউনুচ বলেন, , সব ধরনের সবজির দাম আরও কমবে। কয়েকদিন আগেও সব ধরণের সবজি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। এখন ১৫ টাকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বেশীরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে।
দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা জুয়েল বলেন, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই; বরং আরও কমবে। দাম প্রসংগে তিনি বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারণে বেগুনের গাছের পাতা হলুদ হয়ে কুঁকড়ে মরে যাচ্ছে। তাছাড়া সাদামাছি ও পাখির আক্রমণে ক্ষতি হওয়ায় বেগুনের দাম কিছুটা বেশি রয়েছে।
এদিকে, সবজির দাম কিছুটা কমে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতা আয়নাল হক বলেন, শাক-সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। সরকার মনিটরিং করলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক বিকাশ রায় বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রতিদিন মাছ-মাংস খাই না। শাকসবজি খেয়েই বাঁচি, এগুলোর দাম বেশি থাকলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
এদেশে কৃষকের কথা কেউ ভাবে না জানিয়ে কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের প্রতিনিয়ত ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, বাজারে যোগান বাড়ায় দরপতন হয়েছে। তবে আগাম সবজিতে কৃষক ভাইয়েরা ভালো দাম পেয়েছে। সময় ও বাজারের চাহিদা বুঝে চাষাবাদের জন্য ‘বাংলা শেপ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে কৃষকদের সময় ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টি ছোট কৃষকরা অনেকেই বুঝছেন না। বড় কৃষকরা এটা ভালোভাবে বুঝতে পারায় তারা উচ্চ মূল্যেই বিক্রি করছেন