শিশুরা অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই খুব সহজে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের অতি পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা হচ্ছে পেট ব্যথা। শিশুর পেট ব্যথা হলে বাবা-মা, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, যা খুবই স্বাভাবিক।
শিশুর পেট ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুবাইয়াত আলম রুবা।
ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা গ্যাস, বিশেষ কোনো খাবার অথবা দুধে অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাসজনিত কারণ (ইনফেকশন), বদহজম, কৃমি সংক্রমণ, প্রস্রাবে সংক্রমণের জন্য শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া লিভারজনিত রোগ, পিত্তথলির সমস্যা, অগ্ন্যাশয় প্রদাহ, অ্যাপেন্ডিসাইটিসসহ বিভিন্ন সার্জিক্যাল সমস্যায়ও শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে।
শিশুর পেটে ব্যথাকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। শিশুরা অনেক সময় বুঝিয়ে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে না। বাবা-মায়ের কাছ থেকে সঠিকভাবে রোগের ইতিহাস নিয়ে এবং শিশুকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে রোগের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।
শিশুর পেট ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
নানা কারণে শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে। শিশুর সুস্থতার জন্য পেটে ব্যথার কারণ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি।
১. ৩ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর ঘন ঘন পেট ব্যথা অনেক সময় কোনো রোগ ছাড়াই হয়ে থাকে, যাকে ফাংশনাল এবডোমিনাল পেইন বলে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মানসিক কারণে হয়ে থাকে এবং এর নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই।
এই ধরনের শিশু অত্যাধিক মানসিক চাপে ভোগে। স্কুলে যেতে না চাইলে, পড়া ভালো না লাগলে, বন্ধুরা কোনো বিষয় নিয়ে উত্যক্ত করলে, পরিবারে কোনো অশান্তি থাকলে, হঠাৎ বাসা অথবা বন্ধু পরিবর্তন করলে পেট ব্যথার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শিশুর এই ধরনের পেট ব্যথা ইচ্ছাকৃত নয়, বরং শিশুর মানসিক চাপ ও অশান্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে পেট ব্যথার মাধ্যমে। যদিও এক্ষেত্রে পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায় না। এ ধরনের শিশুর মানসিক চাপ কমানোর ব্যাপারে বাবা-মাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
২. বর্তমান সময়ে শিশুদের পেট ব্যথার একটি অন্যতম কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব এবং জীবনযাত্রার গতি বেড়ে যাওয়ায় শিশুকে টয়লেট করার জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল কারণ। অনেক শিশু দীর্ঘসময় স্কুলে অবস্থান করে এবং পায়খানার বেগ এলেও তা চেপে রাখে। এর ফলে শিশুদের গুরুতর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং খাওয়ার পর ঘন ঘন পেট ব্যথা হয়।
এ সমস্যা ও ব্যথা প্রতিরোধের উপায় হলো শিশুকে প্রতি বেলা খাবারের পর টয়লেটে বাধাহীনভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় দিতে হবে। দৈনন্দিন কাজের নিয়মিত অংশ হিসেবে মলত্যাগের এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মলত্যাগের জন্য শিশুকে কোনোভাবেই জোর করা যাবে না। শিশুকে সুযোগ দিতে হবে এবং মলত্যাগ প্রাকৃতিকভাবে হওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে। প্রচুর পানি, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাইরের কেনা খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
৩. বড়দের মতো শিশুদেরও পেটে গ্যাস হতে পারে, যা পেট ব্যথার আরেকটি অন্যতম কারণ। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি নবজাতকের পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ। এতে বাতাস ঢুকে পেটে গ্যাস হয়। আবার ফিডারে দুধ পান করানোর সময় কিছু বাতাস শিশুর পেটে প্রবেশ করে এতেও গ্যাস হয়। এর কারণে শিশুর পেট ব্যথা হয়।
সেক্ষেত্রে দুধ খাওয়ানোর পর কাঁধের বাম অথবা ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের উপর থেকে নিচে হাত বুলিয়ে দিতে হবে, এতে বাতাস বের হয়ে যায়।
৪. বুকের দুধের পাশাপাশি যখন বাড়তি খাবার দেওয়া হয় তখন অনেক সময় শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে এবং পেট ব্যথা হয়। হঠাৎ নতুন খাদ্যাভাসে খাপ খাওয়াতে সময় নেয় বলে এমন হতে পারে। এতে দুঃশ্চিান্তর কিছু নেই।
৫. কৃমি সংক্রমণ শিশুর পেট ব্যথার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি কৃমি সমস্যা প্রতিরোধের উপায় শেখানো জরুরি। খাবার খাওয়ার আগে ও পরে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, মুখে নোংরা হাত না দেওয়া, নখ কেটে ছোট করে রাখা, খালি পায়ে টয়লেটে না যাওয়া ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দিতে হবে শিশুকে।
ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, শিশু যদি তীব্র পেট ব্যথার কারণে বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারে, ব্যথায় পেট শক্ত হয়ে গেলে, যদি ব্যথার সঙ্গে জ্বর, বমি অথবা পাতলা পায়খানা থাকে, ৩ দিনের বেশি পায়খানা না হলে, পেটে আঘাত পেলে কিংবা শ্বাসকষ্ট থাকলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পেট ব্যথার সুনির্দিষ্ট কারণ জানার আগে শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।