শাকসবজির যে দাম বাপু, হামেরা কিনিবা পারি না

‘শাকসবজির যে দাম বাপু, হামেরা কিনিবা পারি না। ৭০-৮০ টাকা কেজির নিচে কুনো সবজি পাওয়া যায় না, তাতে কয় দিন তকা ডাইল ভর্তা দিয়ে ভাত খাচি। সরকারি ডাইল কিনে নিছি, ওইলায় রান্না করেছি আবার ভর্তাও করে খাচি।’

আজ শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের কাঁচাবাজারে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শওকত আলী (৫৮) নামের এক ব্যক্তি। জেলা শহরের উপকণ্ঠে ফুলতলা-ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শওকত আলী বাজারে এসেছিলেন কাঁচাবাজার করতে।

পেঁয়াজ দেখিয়ে শওকত আলী জানান, সবচেয়ে খারাপ মানের পেঁয়াজ এক কেজি কিনেছেন ১০০ টাকায়। এখন করলা কিনতে এসে দেখেন ৮০ টাকা কেজি। এ জন্য সবজি কিনবেন কি না, সেটা ভাবছেন তিনি। শুধু শওকত আলীই নন, দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন সবজির বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।

বিক্রেতারা জানান, পঞ্চগড়ে বিক্রি হওয়া শাকসবজিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই জেলায় উৎপাদিত হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য জেলায় এসব মাল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। এতে দিন দিন সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে পটোল, ফুলকপি, গাজর, টমেটোসহ কয়েকটি সবজি অন্য জেলা থেকে পঞ্চগড়ে আসছে। এ ছাড়া সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের কাঁচাবাজার, ব্যারিস্টার বাজার, মিলগেট বাজার, জালাসী বাজার ও কমলাপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম নিয়ন্ত্রণহীন। এক সপ্তাহ আগে যে দামে বিভিন্ন সবজি বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি দেশি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কার্ডিনাল আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা আর গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ধনেপাতা প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দুল আর ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচু ৫০ থেকে ৬০ টাকা,মিষ্টিকুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ডাঁটাশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউশাক ও মুলাশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি মুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পঞ্চগড় কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা আমেনা আক্তার (৩৬) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই সবজির বাজার খুব বেড়েছে। এ জন্য আমরা যেটা এক কেজি কিনতাম, সেটা এখন আধা কেজি কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এক পোয়া কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় কিনেছি, অথচ আজকে এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় কিনতে হলো। এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা সাধারণ ক্রেতারা খুব দুর্ভোগে পড়েছি।’

জেলা শহরের ভাই ভাই বাণিজ্যালয় নামে একটি সবজির দোকানের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা ২০ বছর ধরে এখানে সবজির ব্যবসা করি। কিন্তু কোনো বছর এত দাম দেখিনি। সব মালামাল বেশি দামে কেনা, এ জন্য বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। ক্রেতারা আগে যে পরিমাণে সবজি কিনতেন, এখন তা কমিয়ে কম করে কিনছেন।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পঞ্চগড়ে ডিমসহ কাঁচাবাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন ক্রেতাদের হয়রানি করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’