সন্তানের ওজন নিয়ে কখন উদ্বিগ্ন হবেন?

সন্তানের ওজন ও স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবা অনেক দুশ্চিন্তা করেন। খাবার, শারীরিক কার্যকলাপ এবং ঘুমের যথেষ্ট যত্ন নেওয়ার পরও যদি ওজন না বাড়ে, তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে এতে বেশি চিন্তিত না হয়ে বাচ্চার গ্রোথ চার্টের উপর খেয়াল রাখা উচিত।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রথম কয়েকদিন ব্যতীত বাচ্চার ওজন ধীরে ধীরেই বাড়তে থাকে। আবার কিছুদিন পর হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে কিন্তু তারপর আবার তা দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ওজন বৃদ্ধির গ্রাফটা সার্বিকভাবে একই রকম হবে না। তবে ওজন বৃদ্ধির গ্রাফটা উপরের দিকেই উঠছে কিনা, তা কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে।

আর আপনি যদি বাচ্চার ওজন না বাড়া নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে থাকেন তবে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য চকলেট কতটা ক্ষতিকর?শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য চকলেট কতটা ক্ষতিকর?
শিশুর সঠিক ওজন অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার কারণ

সম্ভাব্য অনেক ধরনের কারণই থাকতে পারে যেটা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের মাসের পর মাস বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, বাচ্চার খাবারের তালিকা এবং আচার-আচরণ দেখে নির্ণয় করে থাকেন। তবে আপনার বাচ্চা ঠিকঠাক বাড়ছে না, এর মানে হচ্ছে হয়ত সে ঠিকমতো খাচ্ছে না অথবা পুষ্টি গ্রহণ কিংবা কাজ করায় ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

এই সমস্যাগুলোর কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো

খাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা
আপনার বাচ্চা ঘনঘন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কিংবা সঠিক পরিমাপে দুধ খাওয়ার আগেই সে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। অথবা আপনার শিশুর হয়ত চুষে খাওয়ার ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল, যে কারণে যথেষ্ট পরিমাণ দুধ সে চুষে খেতে পারছে না। এটা ফিডারের ক্ষেত্রেও হয়, তবে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।

আপনার বাচ্চার জন্মগত ঠোঁটকাটাজনিত কোনো সমস্যা থাকলে সেটাও তার খাওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে বিশেষ বোতল ও নিপল ব্যবহার করে কিংবা বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
অনেক শিশুই আছে, যারা শুয়ে থাকলে জিহ্বা কিছুটা একপাশে হেলে পড়ে, এসব বাচ্চাদের বুকের দুধ গ্রহণে সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা ফিডারে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম। আপনি যদি আপনার শিশুকে ‘ফরমুলা’ খাইয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফরমুলা ঠিকঠাক ভাবে বানানো না হলে সেক্ষেত্রেও শিশুর ওজন বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।

কীভাবে শিশুদের ট্রমা কাটবে?কীভাবে শিশুদের ট্রমা কাটবে?
অনেকেই আছেন যারা তাদের শিশু ক্ষুধার্ত কিনা সেদিকে না তাকিয়ে একটা সময়সূচি অনুযায়ীই খাইয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রেও শিশুর ওজনে ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শিশুকে তখনই খেতে দেওয়া উচিত যখন সে খেতে চায়

অন্যান্য সাধারণ কারণ
১. আপনার শিশু যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে, সেক্ষেত্রে তার শরীরে বেশি ক্যালোরি ও পুষ্টির প্রয়োজন হয়। এছাড়া অসুস্থতা শিশুর খাওয়ার রুচিও নষ্ট করে দিতে পারে।
২. শিশুর দীর্ঘমেয়াদি পাকস্থলির সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, পেট ব্যথা কিংবা হজমের সমস্যা থাকতে পারে।
৩. আপনি যদি গর্ভপরবর্তী হতাশায় ভুগেন কিংবা আপনার অন্যান্য বাচ্চাদের নিয়েও চিন্তিত থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে হয়ত আপনি আপনার শিশুর প্রতি যথেষ্ট নজর দিচ্ছেন না, যার ফলাফল সে যথেষ্ট পুষ্টি পাচ্ছে না।
এর বাইরে কিছু বিরল কারণেও শিশুর ওজন কম হতে পারে। যেমন– সিস্টিক ফিব্রোসিসের মতো ফুসফুসের সমস্যা, ডাউন সিনড্রোমের মতো ক্রোমোজোমের সমস্যা, রক্তস্বল্পতা অথবা হৃদরোগজনিত সমস্যা, গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সির মত বিপাকীয় সমস্যা ইত্যাদি। তবে এসব ক্ষেত্রে দ্রুত অসুখ নির্ণয় করা খুবই জরুরি।

কিছু শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং আপনাকে কিছু প্রশ্ন করার মাধ্যমে ডাক্তার বোঝার চেষ্টা করবেন যে আসলেই কোনো সমস্যা আছে কিনা। যদি সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে গ্রোথ রেট ছাড়াও আরো অনেক বিষয় পর্যালোচনা করে তিনি বাচ্চার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন

আপনার শিশুর রক্ত, প্রস্রাব অথবা অন্যান্য পরীক্ষা করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিশুর ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ নির্ণয় করবেন। দুধ খাওয়ার সময় বাচ্চার চোয়াল ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা কিংবা চুষে খেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা বুঝতে ডাক্তার হয়ত দেখতে চাইতে পারেন। আপনি কীভাবে বাচ্চাকে বুকের দুধ কিংবা ফিডার খাওয়ান কারণ কখনো কখনো কাজটা খুবই সাধারণ, কখনো বা খুবই জটিল। এরপর ডাক্তার হয়তবা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য আপনাকে কোন পুষ্টিবিদ কিংবা ‘ফিডিং এক্সপার্ট’এর শরণাপন্ন হতে বলতে পারেন।

খবর: শিশুবিকাশ ডট কম