নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হচ্ছে না। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ কথা জানান।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ওনাদের (নরেন্দ্র মোদি ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দুজনের নিউইয়র্কে উপস্থিতি একসঙ্গে হচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্ক থেকে আগে চলে আসছেন আর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একটু পরে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে একধরনের টানাপোড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতে হবে। সমাধান করতে হলে সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না।
এই উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা অবশ্যই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করব এবং ওয়ার্কিং রিলেশন (কাজের সম্পর্ক) যেন হয়। তবে, সম্পর্কটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাই করব।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল ভাড়া করা উড়োজাহাজে নিউইয়র্ক সফর করবে না। বরং, যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চপর্যায়ের সভাগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য দুই দিন আগে ভিন্ন একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কে যাব।’ তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে। এ সময় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানেরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মানবাধিকার–সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে এ সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।
২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য দেবেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন–সম্পর্কিত বিষয়গুলো তাঁর বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।