বিচার বিভাগকে মানুষ হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছিল অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের জন্য ম্যাসেজ। তাই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিচার বিভাগ থেকে অনেক অবিচার হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে যেন আর কোনো অবিচার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির অভিভাষণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার দক্ষ ও সৎ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগে একটি ম্যাসেজ দিয়েছে। কী ধরনের বিচার বিভাগ তারা চাইছেন। আপনারা দেখবেন, আগের প্রধান বিচারপতি সঙ্গে বর্তমানের পার্থক্য। একজন প্রধান বিচারপতি যদি জঘন্য পুলিশ থেকে সোনার তলোয়ার উপহার নেন, ছাত্র জনতার আন্দোলন দমানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়কে নির্দেশ দেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কীভাবে থাকবে?’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘এমন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে মানুষ ন্যায়বিচার পায়। গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি, এই অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থন করে না। ঢালাওভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। এক্ষেত্রে বিচারকদের দেখতে হবে, অযথা নাগরিকরা যেন হয়রানি না হয়।’ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার এক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। ২২ হাজার আহত ও হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু বানিয়েছে। ১০ লাখ গায়েবি মামলা করেছে। মিথ্যা মামলায় কেউ হয়রানি যেন না হয়।’

বিচারকদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি নিজের বিবেকের সঙ্গে কথা বলেন, আপনার নিজের প্রতি অবিচার হলে যে কষ্ট পেতেন, সেটি মনে রাখবেন।’ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘এরশাদ সরকার ৯ বছরে ২৬ জনকে হত্যার ঘটনায় এবং শ্রীলঙ্কায় মাত্র ৯ জনকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। কিন্তু এ ফ্যাসিবাদ সরকার দুই সপ্তাহ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ২২ হাজার আহত ও হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু বানিয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশ গরিব। সবারই জন্য গাড়ি ব্যবস্থা করা কঠিন, তবে অন্য সার্ভিসের উপসচিব যদি গাড়ি ব্যবহার করেন, এখানে জেলা জজ ছাড়া বাকিরা বঞ্ছিত হয়, সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমি নিজে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়তাম। এখনও পছন্দ করি৷ কিন্তু আমাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানোর কারণে সরকারি গাড়িতে চলতে বাধ্য হচ্ছি।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা করা হবে। যেখানে জজকোর্টে নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষা হয়। হাইকোর্টের বিচারকরা তো তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তাই তাদের আরও বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্টনি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিন বিভাগের একটি বিভাগ বিচার বিভাগ। শাসন বিভাগ ভুল করলে বিচার বিভাগ শুধরে দেবে। দুর্নীতি আটম বোমার চেয়ে ভয়ঙ্কর। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করা কিছু বিচারক এখনও বিভিন্ন ভালো জায়গায় রয়েছে। তাই এরা এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকলে সমস্যা তৈরি হবে।’