২০২৫ সালে পারমাণবিক বিদ্যুতে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
রসাটমের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সফল ছিল বিদায়ী ২০২৪ । প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে স্টার্টআপের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সালেই ইউনিটটি থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ ও স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে রসাটম এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

রসাটমের প্রথম উপ-মহাপরিচালক এবং এএসই প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই পেত্রভ জানান, রূপপুর প্রকল্পে প্রথম ইউনিটটি স্টার্টআপের জন্য আমরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বে প্রবেশ করেছি। ইউনিটের পরিচালন সক্ষমতা এবং সকল অপারেশন মোডে বিভিন্ন প্রসেস সিস্টেমের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি বেশ কিছু শেষ মুহুর্তের কাজও সম্পন্ন করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলে ডামি নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং সম্পন্ন হয়। আসল ফুয়েল (ইউরেনিয়াম) লোডের পূর্বে ডামি ফুয়েলের সাহায্যে প্রেসার ভেসেলটিকে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই মাসেই স্ট্যান্ডবাই ডিজেল জেনারেটরগুলোর কোল্ডরান পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। বিশেষ কোনও কারণে যদি ইউনিটের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়, তখন এসব ইকুইপমেন্ট এই জেনারেটরগুলো থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পেয়ে থেকে। নভেম্বরে স্টার্টআপ বয়লার রুমে প্রথম ইগনিশনের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত বাষ্প সরবরাহ শুরু হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর ইউনিটটিকে ন্যুনতম প্যারামিটারে পারমাণবিক জ্বালানী ছাড়াই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বর্তমানে সকল অপারেশন মুডে এর প্রসেস সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চিতের কাজ চলমান রয়েছে।

রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক ডা: জায়েদুল হাসান জানান, দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ ও স্থাপনের শেষ পর্যায়ের অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটির বাইরের কন্টেইনমেন্ট দেয়ালের কংক্রিটিং এর কাজ শিডিউলের আগেই সম্পন্ন হয়। স্বয়ংক্রিয় তাপ অপসারণের জন্য প্যাসিভ হীট রিমুভাল ডিফেকটর স্থাপনও শেষ। কমিশনিং ও স্টার্টআপের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য নির্মাণ ও স্থাপনে কাজ এগিয়ে চলছে।

রসাটম জানায়, বিদায়ী বছরে উভয় ইউনিট স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং ব্যবস্থার ডেলিভারি গ্রহণ করে। রূপপুর প্রকল্পের বিশেষ চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষা সহায়তা এবং রাশিয়া রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমীতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণের কাজ বছর ধরেই চলমান ছিল।

রসাটম আরো জানায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরমাণু শক্তি শিল্পে রসাটম একটি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী বাস্তবায়নাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যার বিবেচনায় রসাটম শীর্ষস্থানীয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশে ২২টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মান করছে সংস্থাটি। এছাড়াও ১০টি দেশে স্বল্প সক্ষমতার ৩৯টি রিয়্যাক্টর রপ্তানী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রুশ রাস্ট্রদূত আলেক্সান্ডার খোজিন বলেন, প্রকল্পের সূচনা থেকেই রসাটম বাংলাদেশে রুশ দূতাবাসের সহায়তায় স্থানীয় জনগনের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পের ব্যাপারে সচেতনতা মূলক অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। জনগন এখন বাংলাদেশের কল্যাণে এই প্রকল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে।

প্রসংগত: রাশিয়ার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটির দু’টি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১,২০০ মেগাওয়াট। সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। এই রিয়্যাক্টরগুলো সকল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। প্রকল্পটি চালু হলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদার দশ শতাংশ পুরণ হবে। পরমাণু বিদ্যুৎ হবে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব। প্রকল্পটির জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাকটর রসাটমের প্রকৌশল শাখা।