ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
অন্যান্য ফসলের তুলনায় বর্তমানে সবজি উৎপাদন কৃষকের জন্য অত্যন্ত সুখকর। কারণ অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজিতে ফলন ও রিটার্ন দুইই বেশী। যেকারণে গত ১০ বছরে ঈশ্বরদীতে সবজি উৎপাদন প্রায় ১০ গুন বেড়েছে। কিন্তু বাজারে সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজির ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। এ অবস্থায় সবজি এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
পনের দিনের ব্যবধানে ঈশ্বরদীতে সবজির ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। আর মাত্র ৭ দিনে এই দরপতন সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় পাইকারী বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শিম ৩২০ থেকে ৪০০ মণ দরে অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। লক্ষীকুন্ডার চরাঞ্চলে কাঁচামরিচ ৮০০ টাকা মণ অর্থাৎ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শিম ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে এবং কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ ১৫ দিন আগেও কপি ও শিম ৫০-৬০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। মাত্র ৭ দিন আগেও কপি ও শিমের দাম ছিলো ৪০ টাকা কেজি। পাশাপাশি মুলার দাম কমে পাইকারিতে ৫-৭ টাকা এবং খুচরায় ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য শীতকালীন সকল সবজিতেও দাম কমার প্রভাব পড়েছে।
কাঁচামালের আড়তদার সঞ্জয় সরকার জানান, এখন বাজারে বিপুল পরিমাণে শীতকালীন সবজি বিপুল আমদানি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশী থাকায় ব্যাপকভাবে দাম কমেছে।
সবজির দামের পতনে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বাড়ার পরও বাজারে কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে, ফলে কৃষকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক আজাগার আলী বলেন, বীজ, সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরির খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এর ওপর কম দামে সবজি বিক্রি করার কারণে পুঁজি উঠে আসছে না। কারণ ১টি ফুলকপি উৎপাদন করতে প্রায় ১৫ টাকা খরচ হয়। আর সেই কপি আমাদের ৭-৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক আবদুল্লা বলেন, জমিতে চাষ করতে এখন অনেক খরচ হয়। কিন্তু বাজারে এসে দেখি দাম নেই। জমি থেকে দিনমজুর দিয়ে উঠিয়ে পরিবহনে করে বাজারে আনতে যে খরচ হচ্ছে তাও উঠে আসছে না। শিম আজ বিক্রি করলাম মাত্র ৮ টাকা কেজি। এই শিম ১০ দিন আগে বিক্রি করেছিলাম ৪০ টাকা কেজি।
এদেশে কৃষকের কথা কেউ ভাবে না জানিয়ে কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের প্রতিনিয়ত ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে।
বাজারে স্কুল শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, ১০০ টাকার সবজি কিনে ব্যাগ ভরে গেছে। অথচ ১৫ দিন আগে ৫০০ টাকার সবজিতে ব্যাগ ভরতো না। তবে মাছ-মাংসের দাম কমলে ভালো হতো।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, বাজারে যোগান বাড়ায় দরপতন হয়েছে। আগাম সবজিতে কৃষকরা ভালো দাম পেয়েছে। সময় ও বাজারের চাহিদা বুঝে চাষাবাদের জন্য ‘বাংলা শেপ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে কৃষকদের সময় ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজি উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ছোট কৃষকরা অনেকেই বুঝছেন না। বড় কৃষকরা ভালোভাবে বুঝতে পারায় তারা উচ্চ মূল্যেই বিক্রি করছেন।