রাতে না ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কেউ অফিসের কাজে, কেউবা অকারণে না ঘুমিয়ে পার করছেন লম্বা রাত। অনেকেই স্মার্টফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক, টিকটক স্ক্রল করে, কেউ আবার গেমসে আসক্ত, তাছাড়া প্রিয় মানুষের সঙ্গে ফোনালাপ তো আছেই।
বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে রাত জাগার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বড়দের সঙ্গে এখন বাচ্চারাও রাতে দেরি করে ঘুমায়। কিন্তু এই অভ্যাস শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা জানেন না অনেকেই।
অধিকাংশ মানুষই জানেন না রাত জাগলে রয়েছে জীবন ঝুঁকি। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বদলে যেতে পারে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘটতে পারে শারীরিক ও মানুষিক মারাত্মক সব রোগব্যাধি। আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক রাত জাগলে কী কী ক্ষতি হতে পারে।
১. মেটাবলিক ডিসঅর্ডার
মেটাবলিক ডিসঅর্ডার হলো এমন এক ব্যাধি যা শরীরের প্রোটিন, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টগুলোর প্রক্রিয়াকরণ এবং বিতরণকে নেতিবাচক-ভাবে পরিবর্তন করে। এর ফলে অলসতা, ওজন কমে যাওয়া, জন্ডিস ও খিচুনির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
২. স্লিপ ডিসঅর্ডার
আমাদের শরীরে একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি রয়েছে যাকে সার্ক্যাডিয়ান সাইকেল বলা হয়। এই রিদম ২৪ ঘণ্টা উপর ভিত্তি করে আমাদের শরীরকে বলে দেয় কখন ঘুমাতে হবে এবং কখন জেগে উঠতে হবে। এটি হরমোন, হজম এবং শরীরের তাপমাত্রার মতো শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এরিক ঝাউ দাবি করেছেন দীর্ঘ দিন রাত জাগলে মানব শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ সার্ক্যাডিয়ান সাইকেলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এর ফলে হতে পারে অনিদ্রার মতো মারাত্মক সমস্যা। ঘুমানোর সময় অম্বস্তি, ঘুম না আসার প্রবণতা বাড়ে। তাছাড়া রাতে ঘুমাতে না পারা ও দিনে ঘুমিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এই রোগ কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থায় চলে গেলে চিকিৎসার আবশ্যকতা হতে পরে। ঘুমের ব্যাধি বা স্লিপিং ডিসঅর্ডারের ফলে শারীরিক ক্লান্তি, অবসাদ, বিরক্তি, কোনও কাজে মনোযোগ দিতে না পারার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
দক্ষিণ ক্যারেলিনার ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুন পিচার জানান, চট করে মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, প্রিয়জনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা, ছোটখাটো সমস্যাতেই প্রতিক্রিয়া দেখানো, এগুলো রাতে ঘুম না হওয়ার ফলেই হয়। এর ফলে আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসও কমে যেতে পারে। প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর। পড়ে যেতে পারে চুলও।
৩. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার বা পাচনতন্ত্র ব্যাধী। সার্ক্যাডিয়ান সাইকেল পাচনতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। রাত জাগার ফলে এই সাইকেলের নেতিবাচক প্রভাব পাচনতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এতে করে পেটে অস্বস্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
৪. কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হলো হৃৎপিণ্ড বা রক্তনালীর সাথে জড়িত যেকোনো রোগ। এটি রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ নামেও পরিচিত।।এই অবস্থায় হৃদপিণ্ডের পেশীতে পর্যাপ্ত রক্ত ,অক্সিজেন এবং পুষ্টি পাঠাতে বাধা প্রাপ্ত হয়।এতে করে বুকে ব্যথা , শ্বাসকষ্ট , ক্লান্তি , চেতনা হ্রাস, হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অ্যানিউরিজম, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ, হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে যারা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাত জেগে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
৫. ক্যানসার
রাত জাগার ফলে সার্ক্যাডিয়ান সাইকেলের ভারসাম্যহীনতা মানবদেহের সেলুলার ফাংশনে প্রভাব ফেলে।এটি ডিএনএ ও কোষ চক্রতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম অনুসারে সার্ক্যাডিয়ান সাইকেলে ব্যাঘাত ঘটলে শেষ পর্যন্ত ক্যানসারের মতো মরণ ব্যাধি, বাড়াতে পারে মৃত্যু ঝুঁকি ।