নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে শাবনূর যেভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন, এতে তাকে ‘আইডল’ হিসেবে মানেন এই প্রজন্মের অনেক নায়িকা। বাংলা চলচ্চিত্রের বহু প্রতিভাধর সেই চিত্রনায়িকার আজ (১৭ ডিসেম্বর) জন্মদিন। জীবনের ৪৫টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৪৬ বছরে পা দিলেন।
১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর খ্যাতিমান এই নায়িকার জন্ম হয়েছিল যশোরের শার্শা উপজেলায়। তার বাবার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাবনূর সবচেয়ে বড়। তার ছোট বোনের নাম ঝুমুর, ভাই তমাল।
পারিবারিকভাবে শাবনূরের নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। পরে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তার মেনটর এহতেশাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুরকে বানিয়ে দেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ হচ্ছে রাতের আলো।
১৯৯৩ সালে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও প্রয়াত সুপারস্টার নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দেন বেশ কয়েকটি সুপারহিট ও ব্যবসাসফল ছবি। সালমান-শাবনূর জুটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে এখনো বিবেচনা করা হয়।
সালমান শাহর মৃত্যুর পর নায়ক মান্না, রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন বহু ছবিতে। সেখানেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ একবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, রেকর্ড ১০ বার ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ এবং সাতবার ‘বাচসাস পুরস্কার’সহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন শাবনূর।
২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন শাবনূর। বিয়ের পর ভাই ও বোনদের মতো শাবনূরও স্বামী অনিকের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর শাবনূর-অনিক জুটির ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম সন্তান পুত্র আইজান নিহান।
২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি অনিক মাহমুদের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বর্তমানে সন্তানকে নিয়ে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়াতেই বসবাস করছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের সুপারহিট এই নায়িকা।
৪৬তম জন্মদিনেও শাবনূরকে স্মরণ করছেন তার অনুরাগীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় নায়িকাকে নিয়ে ছবি, শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিচ্ছেন ভক্তরা। এরই মধ্যে জন্মদিন উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন শাবনূর। কিন্তু সেখানে স্বাভাবিকের তুলনায় এবার নিজের জীবন নিয়ে বেশিই আক্ষেপ করলেন নায়িকা। তবে কি ভালো নেই এই ঢালিউড কুইন?
ব্যক্তিগত জীবন বহু চড়াই-উতরাইয়ের ওপরেই কেটেছে শাবনূরের। আবেগাপ্লুত হয়ে শাবনূর বললেন, ‘দীর্ঘ দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যত ঝড়ঝাপটা আমার ওপর এসেছে পৃথিবীর অন্য কোনো শিল্পীকে বোধহয় অতটা করতে হয়নি। প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, নায়ক সালমান শাহ, নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, এক বিদেশি নাগরিককে আমার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যে সম্পর্কের গুঞ্জন, সালমানের হত্যা/আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হওয়া, একাধিকবার এফডিসির বিভিন্ন সমিতি কর্তৃক ব্যান হওয়া, কী ফেস করতে হয়নি আমাকে! একইসঙ্গে পারিবারিক নানা টানাপোড়েনে অতিষ্ঠ ছিল আমার জীবন।’
মূলত বিচ্ছেদ জীবন তার জীবন অতিষ্ঠ হওয়ার কারণ ছিল বলে জানান শাবনূর। কিন্তু সে থেকেও নিজেকে সামলে নিয়েছেন নায়িকা। শাবনূরের কথায়, ‘অন্য যে কেউ হলে বোধ হয় পাগল হয়ে যেত, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিত বা আত্মহত্যা করত। আমি কিন্তু সব নেগেটিভকে মনের জোরে পাশ কাটিয়ে জীবনটাকে পজিটিভবলি গড়ে তুলতে পেরেছি।’
সেই বিচ্ছেদ থেকেই সংসার জীবন নিয়ে তিক্ততা শাবনূরের। তীব্র ইচ্ছাশক্তি থেকে নিজেকে সামলে নিলেও সাংসারিক হওয়ার আর কোনো ইচ্ছে নেই বলে স্পষ্ট জানান নায়িকা। হতাশা প্রকাশ করে শাবনূর বলেন, ‘আমার আর সংসারী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া যে কোনো নারীর জন্য ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, যে কারণেই বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হয়েছে।’ শাবনূর এও বলেন, ‘তবে আমার আর বিয়ের ইচ্ছা না থাকার কারণ হচ্ছে একমাত্র পুত্র আইজানকে প্রতিষ্ঠা করা। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।’
ফের চলচ্ছিত্রে ফিরছেন তিনি। গেল বছর জানুয়ারি মাসে তিনি শুরু করেছেন ‘রঙ্গনা’ নামের একটি সিনেমার শুটিং। এই সিনেমার মহরতেই শাবনূরের সামনেই ঘোষণা করা হয় ‘এখনো ভালোবাসি’ সিনেমা। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর ‘মাতাল হাওয়া’ নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করার কথা আছে তার।
কাজে ফেরা প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, ‘গত বছর রঙ্গনা নামে এক ছবিতে অভিনয়ের কাজ শুরু করেছিলাম। নানা কারণে ছবিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। শিগগিরই কাজে ফেরার ইচ্ছা আছে।’
এদিকে সিনেমার ঘোষণা দিলেও পুরোপুরি ফিট না হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চাননা শাবনূর। তাই সময় নিচ্ছেন। এখন অপেক্ষা শুধু ফেরার।