রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ নিতে পারে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘জেলা ও দায়রা জজ একই ব্যক্তি। সিভিল মামলায় তিনি জেলা জজ এবং ক্রিমিনাল মামলায় দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যক্তিরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোয় কাজ করতে পারেন। এতে কোনও সাংবিধানিক সংঘর্ষ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারা হাইকোর্ট সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করেছে। বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি সংক্রান্ত ২০ ও ২১ ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭ ক ও ৭ খ অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণভোটের বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত ধারা বাতিল করায় গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হয়েছে। তবে সংশোধনীর অন্য ধারাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পরবর্তী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকলেও, হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে অন্তত দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। কারণ ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করলেও পুরো সংশোধনী বাতিল করেনি। রায়ে বলা হয়েছে, সংসদ ভবিষ্যতে জনমতের ভিত্তিতে সংশোধনী আইন পর্যালোচনা করতে পারবে।
রুল শুনানিতে সুজনের পক্ষে ড. শরিফ ভূঁইয়া এবং বিএনপির পক্ষে জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ নিয়ে হাইকোর্টের এ রায় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আগামী দিনে এ ইস্যুতে রাজনৈতিক দল ও সংসদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।