মোঃ রুকুনুজ্জামান (পার্বতীপুর) দিনাজপুরঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে ঢাকায় আটকে পড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চার মাস পর ভারতে ফিরে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নীলফামারীর ডোমারের চিলাহাটি দিয়ে ভারতের হলদিবাড়ী প্রবেশ করে ট্রেনটি। তবে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্ট ও ভিসাধারী যাত্রীদের নিয়ে ভারতের নিউ জলপাইগুঁড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত চলাচল করা এই ট্রেনের পরিষেবা আবার কবে চালু হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, দীর্ঘ চার মাস পর বাংলাদেশ থেকে আবার ভারতে ফিরে গেল মিতালী এক্সপ্রেস। তবে যাত্রী নিয়ে নয়, যাত্রী ছাড়া। কোনো যাত্রী ছাড়াই জীর্ণ ধুলোমাখা খালি বগি নিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতারের গেট অতিক্রম করে মিতালী এক্সপ্রেস। বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্য এতোদিন ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের শান্টিং ইয়ারের কাছেই খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল। ৫ আগস্ট যাত্রী নিয়ে ভারত থেকে যাওয়ার পর ভারতীয় রেলের তরফে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসায় বাংলাদেশেই আটকে পড়ে ভারতের শিলিগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী এই ট্রেনটি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকায় রওনা দিয়েছিল। বরাবরের মতো ট্রেনটি ভারতের হলদিবাড়ী বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। কিন্তু দেশের অস্থিতিশীল প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আটকে যায় ট্রেনটি। গত ৯ ডিসেম্বর দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠকের পরই ভারতের কোটি টাকার এই ট্রেনটি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন এসে মিতালী এক্সপ্রেসের খালি বগিগুলি হলদিবাড়ী স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন (WDM 3D 6547)সেটিকে পৌঁছে দিয়ে আবার চিলাহাটিতে ফিরে আসে। আর সেখান থেকে ট্রেনটি ভারতীয় ইঞ্জিন দিয়ে হলদিবাড়ী স্টেশনের মেনটেনেন্স শেডে ট্রেনটি নিয়ে যায়।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০২২ সালের ১ জুন উদ্বোধনের পর মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সপ্তাহে রোববার ও বুধবার ভারতীয় সময় বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাত ১০টায় পৌঁছে। এদিকে, ঢাকা থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ৭টায়। সকালে বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী সীমান্ত দিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ভারতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিনে। আবার ভারতে মিতালীর বগিগুলো হলদিবাড়ী স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে ইঞ্জিনটি চিলাহাটিতে ফিরে আসে।
চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হায়দার আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকায় আটকে ছিল। চার মাস পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে খালি বগিগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ে হলদিবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। ভারতের ছয়জন স্টাফকে তাদেরকে ট্রেনটির চারটি এসি বার্থ, ৪টি এসি চেয়ারকার ও ব্রেক ভ্যানসহ দুটি পাওয়ার কার বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালের পর ২০২২ সালের ১ জুন হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রুটে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৫৭ বছর পর আবার চালু হওয়া মিতালী এক্সপ্রেসটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে।