মদনে দরিদ্র নারীদের বঞ্চিত করে একটি মহিলা মার্কেট পুরুষদের দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মার্কেটে নারীদের পরিবর্তে পুরুষরাই জমজমাট ব্যবসা করছেন। তবে অধিকাংশ দোকানই জামানত নিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী বাজারে (ওম্যান্স কর্নার) মহিলা মার্কেটে এমন ঘটনা ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন দরে সরকারের তহবিলে জমা হচ্ছে না মহিলা মার্কেটের কক্ষ ভাড়ার টাকা। প্রশাসনের কোনো দপ্তরও জানে না এ মার্কেট কার? অথচ নিয়ম রয়েছে মাসে প্রতিটি (ওম্যান্স কর্নার) রসিদের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ভাড়ার টাকা জমা দেওয়ার। এসবের কোনো তোয়াক্কাই করছে না দখলদার ব্যক্তিরা। নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও মার্কেটের দোকানঘর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন কতিপয় পুরুষ।
মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী বাজারে নারীদের ব্যবসা করার জন্য ২০০০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয় এ মার্কেট। এ মার্কেটের সুবিধাভোগী হবেন দরিদ্র খেটে খাওয়া নারীরা। মহিলা মার্কেটটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু বাস্তবে কেউ জানেন না মার্কেটটি কার অধীনে।
গত ২৩ নভেম্বর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তিয়শ্রী বাজারে মহিলা মার্কেটে কোনো নারীর দোকান নেই। মার্কেটে প্রথম দোকানটি রায়হান টেলিকম। এ দোকান বরাদ্দ নেন তিয়শ্রী নূর হোসেন খান একাডেমির সাবেক অফিস সহকারী জিয়াউল হকের স্ত্রীর নামে। জিয়াউল হকের কাছ থেকে ৪ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন রায়হান টেলিকম। তিনি প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন। বাস্তা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নূরুল আলম খানের স্ত্রীর বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পান্না আক্তারের নামে রয়েছে মার্কেটের একটি কক্ষ।
বাস্তা দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র মৌলভির দখলেও রয়েছে মার্কেটের একটি কক্ষ। আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন মিয়ার দখলে রয়েছে দুটি কক্ষ। সাবেক ইউপি সদস্য খোকন মিয়ার স্ত্রীর নামেও রয়েছে একটি কক্ষ। এভাবেই এলাকার প্রভাবশালীরা মহিলা মার্কেটের ১২টি কক্ষ দখলে নিয়ে মালিক সেজে ঘরের ভাড়া উত্তোলন করে আসছেন। তবে কানাকড়িও জমা হয় না সরকারি কোষাগারে। এসব দখলদারের কারণে এলাকার দরিদ্র নারীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাস্তা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নূরুল আলম খান বলেন, ‘আমার স্ত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। যে জায়াগায় মহিলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে আমার একটি টিনশেড ঘর ছিল। তৎকালীন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মহিলা মার্কেটে আমাকে একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেটা আমার স্ত্রী পান্না আক্তারের নামে। কক্ষটি আমি ভাড়া দিয়েছি।’
বাস্তা দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র মৌলবী সাদেক মিয়া জানান, তিনি যে কক্ষটি নিয়েছেন, সেটি তাঁর স্ত্রীর নামে বরাদ্দ নেই। তিনি আরেকজনের কাছ থেকে চাবি নিয়েছেন ওষুধের দোকান করবেন বলে।
এ ছাড়া অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন ও সাবেক অফিস সহকারী জিয়াউল হকের মোবাইল ফোনে কল করলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
মহিলা মার্কেট পুরুষের দখলে থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান। তাঁর ভাষ্য, মহিলা মার্কেটের ব্যাপারে সাবেক ইউএনও প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। দুইবার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়াল জানান, মহিলা মার্কেট মদন এলজিইডির মাধ্যমে নির্মাণ হয়েছে। তবে এ মার্কেটের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেজোয়ান ইফতেখার বলেন, ‘মহিলা মার্কেটের ব্যাপারে আমার জানা নেই। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’