হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানেই নিজেকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে—এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি। আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, দল–মত–ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’
আজ শুক্রবার বিকেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। তারেক রহমান সবাইকে দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা জানান।
গত সাড়ে ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর জন্য পতিত শেখ হাসিনা সরকারকে দায়ী করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিগত অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার নিজেদের শাসন-শোষণ থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এখনো সে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিতাড়িত স্বৈরাচারের দুঃশাসনের ১৫ বছরে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা তাদের ধর্মীয় স্থাপনার ওপর যে হামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো যদি নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখব, একটা হামলাও কিন্তু ধর্মীয় কারণে সংঘটিত হয়নি। বরং কথিত যে রাজনৈতিক দলটা, এদের হীন অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাই ছিল এসব হামলার নেপথ্য কারণ।’
বাংলাদেশে কখনোই, কোনোকালেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হামলার পরিস্থিতি ছিল না—এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও এটি ঘটার কোনো কারণ আমি দেখি না। এমন বাস্তবতায় আপনাদের অনেকে হয়তো একমত হবেন যে হাতে গোনা দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুকেন্দ্রিক অধিকাংশ হামলার ঘটনা কিন্তু ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং আমরা যদি খুব খেয়াল করে দেখি, এসব হামলার ঘটনার অধিকাংশ অবৈধ লোভ ও লাভের জন্য দুর্বলের ওপর সবলের হামলা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী—প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বচ্ছন্দে বিনা বাধায় উপভোগ করবে—এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান—মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিল না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেক নাগরিকের একমাত্র পরিচয়—আমরা বাংলাদেশি।’
শেখ হাসিনার সরকারের শাসনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছর দেশে আইনের শাসন ছিল না বলেই প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, দল–মত, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।