ওসমান গনি, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পেঁয়াজ চাষে সমৃদ্ধ পাবনা জেলার সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের সিংহভাগ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। এরমধ্যে বেশি উৎপাদন হয় জেলার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায়। পেঁয়াজ রোপণে শ্রমিক হিসেবে মাঠে যাঁরা কাজ করছেন তাদের একটি অংশ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী।
ইতোমধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষে বাজারজাত করণের পাশাপাশি হালি বা চারা পেঁয়াজ রোপণের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বেড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি হালি বা চারা পেঁয়াজ রোপণে বাড়ির পুরুষ ও নারীদের পাশাপাশি চাষিদের নিতে হয়েছে শ্রমিক। শ্রমিক হিসেবে মাঠে যাঁরা কাজ করছেন তাদের বড় একটি অংশই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। এ সময়টাতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয় এ অবস্থায় শ্রমিক চাহিদা ও স্কুল-কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা কম থাকায় শ্রমিক হিসেবে পেঁয়াজ রোপণ করছে শিক্ষার্থীরা। চাষি ও এসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরের শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চারা বা হালি পেঁয়াজের রোপণ শুরু হয়েছে চলবে পুরো জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।
বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া, রূপপুর, ঢালারচর, চাকলা, হাটুরিয়া , বড়শিলা, নলভাঙা, পাচুরিয়া, খাকছাড়া, তাঁরাপুর সহ আরও বিস্তীর্ণ মাঠে একযোগে শুরু হয়েছে পেঁয়াজের চারা রোপণ। এসময় বাড়ির সব বয়সী নারী ও পুরুষ পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটান। তবে এতেও সঠিক সময়ে রোপণ শেষ সম্ভব হয় না। যাঁর ফলে আলাদা করে শ্রমিক নিতে হয় পেঁয়াজ চাষিদের। সেজন্য জেলার বাইরে থেকেও এ মৌসুমে অনেক শ্রমিক আসেন পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে। চাহিদা থাকায় তাদের পারিশ্রমিকও বাড়তি দিতে হয় পেঁয়াজ চাষিদের । অন্যদিকে বছরের শুরুর এ সময়টাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষা কার্যক্রম ধীরগতিতে চলে। লেখাপড়ায় তেমন চাপ না থাকায় শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে মাঠে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেন। বয়স ও সক্ষমতা ভেদে ৪শ’থেকে ৭শ’ টাকা পারিশ্রমিক পান তারা। বছরের শুরুতে ক্লাস শুরু হলেও কিছুদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থেকেও এ কাজ করেতে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হয় না বলে তাঁদের সাথে কথা বলে জানা যায়। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, স্বচ্ছন্দ্যে হালি পেঁয়াজ বা চারা পেঁয়াজ রোপণ করছেন স্কুল, কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার মাসুমদিয়া এলাকার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন জানান, পড়াশুনার চাপ না থাকায়, তাই ঘরে বসে বা আড্ডা না দিয়ে অতিরিক্ত কিছু আয়ের জন্য আমরা বেশ কিছু শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় এ কাজ করছি। উপজেলার চাকলা গ্রামের মোল্লাপাড়া মাঠে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছিল শাকিল। সে পার্শ্ববর্তী উপজেলার পুন্ডুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। শাকিল জানায়, তার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীই দিন প্রতি ৫শ’’থেকে ৬শ’ টাকা পারিশ্রমিকে এখানে কাজ করছে। শুধু তাই নয় তাদের চেয়ে আরও অল্প বয়সী ছেলেরাও ৪শ’’থেকে ৫শ’ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করছে। সাথে দুইবেলা খাবারও দেন মালিকরা। কিছু শিক্ষার্থী ব্যাচসহ নেমে পড়েছেন পেঁয়াজ রোপণে। কোনো ব্যাচে ১০ জন আবার কোনোটায় ২০-৩০ জন করে শিক্ষার্থী কাজ করছেন। একই বিদ্যালয়ের নবম শেণির ছাত্র সজীব বলেন, জানুয়ারিতে ক্লাস কম,পড়াশুনার চাপ নেই তাই বাড়তি কিছু টাকা রোজগারের জন্য পেঁয়াজ রোপণ করছি। পাচুরিয়া গ্রামের শুভ এবার বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। সে জানান , নোট, গাইড এবং প্রাইভেট পড়াসহ অনেক ব্যয় হবে। সারা বছর এসব ব্যয় মেটাতে পরিবারের কষ্ট হবে তাই ্এ সময় কয়েক দিন পেঁয়াজ রোপণ করে বাড়তি আয় দিয়ে জুতা,পছন্দের শীতের পোশাকসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।
বিভিন্ন পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণে কমপক্ষে ১০-১২ জন শ্রমিকের দরকার হয়। এসময় রংপুর, বগুড়া ও লালমনিরহাটসহ কয়েকটি জেলা থেকে ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও শ্রমিকরা আসেন। এদের সঙ্গে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরাও এতে শ্রমিক সংকট অনেকটা কেটে যায়। বেড়া উপজেলার চকপাড়া গ্রামের চাষি আরজান মোল্লা বলেন,এবার দশ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইতোমধ্যে সাত বিঘা লাগানো শেষ হয়েছে, শ্রমিক সংকটে বেশকিছু ছাত্র পেঁয়াজ লাগাচ্ছে জমিতে। তবে ছাত্ররা দক্ষ না হলেও ভালোই চাঁরা লাগাচ্ছে, চাষি আ. রহমান বলেন, শ্রমিক সংকটের সময় গ্রামের ছাত্রদের দিয়ে কাজটি করানো হয়,ওড়া চাঁরা লাগাতে ভালোই পারে এবং মজুরিও কম। তাই তাদের দিয়ে আমরা পেঁয়াজের চারা লাগানোর কাজটি করিয়ে নেই।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় , চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় চারা বা হালি পেঁয়াজ লাগানোর কাজ পুরোপুরি শুরু হয়ে গেছে ,ইতি মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ জমিতে পেঁয়াজ চারা রোপণ করা হয়েছে এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে চাঁনা রোপণ শেষ হয়ে যাবে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
বেড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর এ প্রতিবেদক জানান, বেড়া উপজেলার পেঁয়াজ চাষের জমিতে আশানুরুপ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় প্রতি বছর পেঁয়াজ চাষের আওতায় অন্য ফসলি জমি ব্যবহার হচ্ছে।#