ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে খানসামায় লাভবান

এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন।
পরিবেশবান্ধব, লাভজনক ও ফসল বেশি হওয়ায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সময়ের সাথে কৃষকেরা এ সার উৎপাদনে ও ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন। কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এমনই একজন কৃষক উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের দুবলিয়া গ্রামের ২৪ বছর বয়সী যুবক ও ডিগ্রি পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুকুল চন্দ্র রায়। তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই সার উৎপাদন করে এলাকাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন।

জানা যায়, স্মার্ট কৃষক মুকুল চন্দ্র রায় বছর খানেক আগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১২ টি রিং চেম্বারে ০৫ কেজি কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিসর। ফলে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন কৃষক মুকুল চন্দ্র রায়। শুরুর দিকে সার উৎপাদন হলেও বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরবর্তীতে মাঠ দিবস ও অনলাইন মাধ্যমে তার জৈব সারের প্রচারণা করলে নিয়মিত মাটির বন্ধু জৈব সারের চাহিদা বাড়তেছে।

মুকুল অর্গানিক এগ্রো ফার্ম নামে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী কৃষক মুকুল চন্দ্র রায়ের সাথে কথা হলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে স্বল্প পরিসরে বাড়ির উঠানে কেঁচো দিয়ে মাটির বন্ধু ভার্মি কম্পোষ্ট বা জৈব সার তৈরি শুরু করেন মুকুল। এই কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর মা। সময়ের পরিক্রমায় এখন তাঁর মূলধন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। গোবরসহ কয়েকটি উপকরণ পচিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে ৩৫- ৪০ দিন। বর্তমানে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় টন কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন মুকুল চন্দ্র রায়। প্রতি কেজি সার বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা কেজি দরে। সেখান থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করে প্রতি দেড় মাস অন্তর অন্তর প্রায় ২৫-৩০ টাকা লাভ হয়। যার ফলে মুকুল চন্দ্র রায়ের সংসারে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে মুকুল রায়ের উৎপাদিত এই জৈব সার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়াও ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রধান উপকরণ জীবিত কেঁচো বিক্রি করে আসছে অতিরিক্ত অর্থ। তাঁর এই সাফল্যে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এবিষয়ে মুকুল চন্দ্র রায় বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে চাষাবাদের সাথে কেঁচো দিয়ে ২ রিং এর মাধ্যমে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন শুরু করি। এখন ১২ রিং-এ এই সার উৎপাদন করতেছি। এই জৈব সার বিভিন্ন ফসলে ব্যবহারের জন্য অনেক মানুষ ক্রয় করে নিয়ে যায়। এতে আমার আর্থিক স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বৃহৎ পরিসরে করা সম্ভব। এতে যেমন জৈব সারের চাহিদা মিটবে তেমনি অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

গোয়ালডিহি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল রায় বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ফসলের রোগবালাই কম হয়। ফলে ফসল চাষের উৎপাদন খরচ কম হয়। এইজন্য জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন আক্তার বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার অন্যতম উপাদান হল ভার্মি কম্পোস্ট সার। এ সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে কৃষক-কৃষাণীদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে। আগ্রহী কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান তিনি।