রূপচর্চায় প্রাচীন কাল হতে হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। বিয়ের আগে কনের গায়ে হলুদ মাখা বহু পুরনো রেওয়াজ। এখন তা জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতাই পেয়ে গেছে। তবে এতে উপকার যেমন আছে, তেমনি ভুল ব্যবহারে বিপত্তিও ঘটে।
বিয়ের অনুষ্ঠান হোক না হোক, গায়েহলুদ হওয়া চাই-ই চাই। কনের গায়ে হলুদ মাখলে কাঁচা হলুদের মতোই রূপ ফুটে উঠবে—এই ধারণা থেকেই হয়তো গায়েহলুদের প্রচলন। তবে হলুদে থাকা বিভিন্ন উপাদান সত্যিকার অর্থেই ত্বকের জন্য উপকার বয়ে আনে। গায়ের রং উজ্জ্বল হওয়া, ব্রণ নাশ, র্যাশ, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন ক্ষত ও পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে কাঁচা হলুদ।
কাঁচা হলুদের রয়েছে জীবাণুনাশক ক্ষমতা। অর্থাৎ এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে। তবে অন্য সব উপকরণের মতোই জেনে-বুঝে হলুদ ব্যবহার করা উচিত। ত্বকের যত্নে যারা নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করেন, তাদের এটির ভালো-মন্দ জানা রাখা জরুরিও; নয়তো ভালো করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
শুধু হলুদ নয়
কাঁচা হলুদ বেটে গায়ে মাখে অনেকেই। তবে হলুদের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। এতে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। ত্বক তৈলাক্ত হলে হলুদের সঙ্গে দুধ, বেসন, মধু অথবা লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। শুষ্ক হলে মধুর পরিবর্তে টক দই ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন গাজরের রস ও অলিভ অয়েল। ব্রণের সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদের সঙ্গে চন্দন গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখুন, যেকোনো প্রাকৃতিক হারবালজাতীয় উপাদান দুধ, মধু, দই, বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা উত্তম।
প্রতিদিন নয়
ত্বকের যত্নে প্রতিদিন না করে সপ্তাহে এক দিন বা দুই দিন হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন হলুদের স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বকের ভেতর আঁচড় কেটে যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় তাড়াতাড়ি বলিরেখা সৃষ্টি হয় ত্বকে। এমন দিন হলুদ ব্যবহার করুন, যেদিন বাইরে বের হতে না হয়। কারণ হলুদ ব্যবহারের পরপরই রোদে গেলে ত্বক জ্বলে যাওয়া, জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সম্ভব হলে রাতে হলুদ ব্যবহার করুন।
অ্যালার্জি থাকলে
ত্বকে যদি অ্যালার্জি সমস্যা থাকে, তবে হলুদ ব্যবহার না করাই ভালো। এতে অ্যালার্জি আরো বাড়তে পারে। এ জন্য শুরুতেই ত্বকে বেশি করে হলুদ মাখতে যাওয়া বা হলুদের প্যাক ব্যবহার করা উচিত নয়।
সামান্য পরিমাণ হাতের ত্বকে লাগিয়ে দেখুন জ্বালাপোড়া হয় কি না। এরপর ধীরে ধীরে হলুদ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ান।
চোখের যত্নে
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে হলুদ। এ জন্য সামান্য হলুদের সঙ্গে মাখন বা জলপাই তেল মিশিয়ে চোখের নিচে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। এ সময় হলুদের প্যাক যেন চোখে না ঢুকে সেদিকে সতর্ক থাকুন।
২০ মিনিটের বেশি নয়
হলুদের প্যাক ব্যবহার করে ২০ মিনিটের বেশি রাখা উচিত নয়। এতে ত্বকে গাঢ় হলুদ দাগ ফুটে উঠতে পারে। আবার র্যাশ দেখা দিতে পারে। ত্বকে সমানভাবে হলুদ ব্যবহার করুন। এক স্থানে বেশি, অন্য স্থানে কম—এটা যেন না হয়। হলুদ লাগানোর পর অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। হলুদ লাগানোর পর ১০ ঘণ্টার মধ্যে ত্বকে সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতেও র্যাশসহ জ্বালাপোড়া তৈরি হতে পারে।