নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের মহাশ্মশানে হত্যাকান্ডের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাসের হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। নাটোরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন বলেছেন, আসামীদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন বলে আশা করছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ কুমার দাস (৫৮) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণ কুমার দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে। মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ন রায় টিপু বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাস ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন। প্রায় প্রতি রাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চারজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না। শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভান্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ কাঁসা এবং পিতলের কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে অনেক বার শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু তিনি শোনেননি, নিজের মত করে তিনি জীবন যাপন করতেন। নিহতের ভাই প্রদীপ দাস জানান, তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলো। তার ছেলে তপু কুমার দাস বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সাথে খেলতেন, চলে যেতেন। ঠান্ডা শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, তার শীত লাগে না। ঐ এলাকার সবাই তাকে শ্মশান বাবু নামেই জানতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী। নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দা’কে নাটোর শহরের সকল মানুষই চিনতো। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে মাঝেই কুকুরের সাথে খেলা করা, কুকুরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি। হত্যাকান্ডের পরে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত, আবার পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে তাকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, বিবৃতিতে তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাশিমপুর মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ আসলে তার ভাগ্যেও তরুণের মত ঘটনাই ঘটতো। রোববার বিকেলে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকান্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইমসিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে।