নাফনদীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার : স্বস্তি ফিরেছে সেন্টমার্টিনে

নাফনদীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে বুধবারে সকালে টেকনাফ উপজেলা প্রকাশনের পক্ষ থেকে নাফনদীতে নৌযান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল।

শুক্রবার বিকেলে জরুরি খাদ্যপণ্য ও যাত্রী নিয়ে ট্রলার চলাচল শুরু হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে তিনটি ট্রলার রওনা দেয়। এসব ট্রলারে খাদ্যসামগ্রী, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পণ্য এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী দ্বীপে ফেরেন।

একই সময়ে সেন্টমার্টিন থেকেও শুটকি নিয়ে একটি ট্রলার ও ১৫ জন যাত্রী নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পৌঁছায়।
ট্রলারের লোকজন জানান, নাফনদীর মায়ানমার সীমানা এড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের ঘোলারচর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সেন্টমার্টিন থেকে শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছাতে ৫০ মিনিট সময় দরকার। সাগরের এ পথটি অধিকতর নিরাপদ বলেও জানান তারা।

তবে টেকনাফের কোনো নৌযান যেন বাংলাদেশে পানিসীমা ছাড়িয়ে মিয়ানমারের পানিসীমায় না যায়, সেজন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ সর্তকর্তা। এই নৌরুটে জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তায়।

শুক্রবার বিকালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন।
টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় যাত্রীবাহী নৌযান চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য সব ধরনের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।’

বিগত সরকারের সময় থেকেই নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন সেগুলো বাংলাদেশের পানিসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের কাছাকাছি না যায় সেজন্য বিশেষ সর্তকর্তা নেয়া হচ্ছে।

আরাকার আর্মি মিয়ানমারের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বন্ধই ছিল ওপার থেকে ভেসে আসা বিস্ফোরণের শব্দ। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত সোমবারের পর ওপার থেকে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আবার গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে তা আগের মতো বিকট না। ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বা তাদের সমর্থিত রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আত্মগোপনে থাকা জায়গা ঘিরে এমন গোলাগুলি হতে পারে।

সাবারাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শরীফ আহমদ বলেন, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার পূর্বে মিয়ানমারের মগনীপাড়া, পতুংজা পাড়া, সাবারংয়ের আচারবুনিয়া এলাকার পূর্বে মিয়ানমারের সুধাপাড়া, উকিল পাড়া, সিকদার পাড়া, ফয়েজীপাড়া এলাকা থেকে আসছে গোলাগুলির এসব শব্দ।
এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।

উল্লেখ্য, ৮ ডিসেম্বর সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর আরাকান আর্মি শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিলে নাফনদে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিবৃতি প্রকাশ করে। এরপর বাংলাদেশও সতর্কতা হিসেবে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।