বরিশাল নগরের ব্যস্ততম পোর্ট রোড দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের বাজার, রয়েছে কাঁচাবাজারও। এতে চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। সড়ক দখল করে ওই অবৈধ বাজার গড়ার নেপথ্যে রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল ও মহানগর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি খান হাবিব।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার ওপর বসা এই ভাসমান দোকান থেকে ইজারাদার ৩০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন।
গতকাল সোমবার সকালে নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পোর্ট রোড ঘুরে দেখা গেছে, গোটা এলাকাজুড়ে বাজার। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে মাছ ও কাঁচাবাজারের হাট। এতে রাস্তাজুড়ে ট্রাক আটকে আছে। এ সময় চিৎকার করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক চালক রাস্তা ছাড়তে বলছিলেন। একজন ট্রাকচালক বলছিলেন, আলু-পটোলের দোকান সরাতে হবে। একজন মাছ বিক্রেতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যবসা করায় এ নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে চলছিল তর্ক।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এক যুগ ধরে পোর্ট রোড দখল করে বাজার গড়ে তুলেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুল। তিনি সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছয় ‘খলিফার’ অন্যতম। অপরদিকে ২০২৩ সালে সিটি নির্বাচনের পর পোর্ট রোড বাজারের ইজারা পান খান হাবিব। এর পর থেকে তৎকালীন মেয়র খোকন আবদুল্লাহর প্রশ্রয়ে হাবিব সড়কটি দখল করে বাজার গড়ে তোলেন। গত ৫ আগস্টের পর হাবিব গা ঢাকা দিলেও তাঁর এই ব্যবসা দেখেন আপন ভাই শ্রমিক দলের সদস্যসচিব খান মোহাম্মদ কামাল।
রাস্তার মধ্যে বসা মাছ বিক্রেতা হোসেন মিয়া বলেন, ‘৩০ টাকা খাজনা দিতে হয় ডালা নিয়ে বসলেই।’ একজন ট্রাকচালক বলেন, তাঁরা দেন ৫০ টাকা।
বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মৎস্যজীবী দলের নেতা কামাল সিকদার বলেন, রাস্তার ওপর থেকে বাজার অপসারণ করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), সিটি করপোরেশন এবং সেনাবাহিনীকে বলেছেন তাঁরা। রাস্তার মধ্যে বাজারের কারণে মাছ পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া দখল করায় সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে।
সড়কের ওপর বাজার গড়ে তোলা প্রসঙ্গে পোর্ট রোড বাজারের ইজারাদার ও মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি খান হাবিব বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছি। রাস্তায় বাজার হোক, সেটা আমিও চাই না। কিন্তু এটাই তো হয়ে আসছে বহু আগ থেকে।’
বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, পোর্ট রোড একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা। এই সড়কটি অনতিবিলম্বে দখলমুক্ত করে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।
নগরের পোর্ট রোডটি বিআইডব্লিউটিএর অধীনে। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা আ. রাজ্জাক এ প্রসঙ্গে বলেন, পোর্ট রোডটি অস্থায়ী বাজারে দখল হয়ে আছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগও করেছেন। সড়কে যানবাহন চলবে, বাজার বসতে পারবে না। এ জন্য অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।