স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৮৭৩ জন শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২১ হাজারের বেশি মানুষ। এনজিওগুলোর দেশের আনাচে-কানাচে কাজ করার সুযোগ আছে। তারা যদি এমন রোগী খুঁজে পায়— যারা আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসা পাচ্ছে না কিংবা আগে রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করতেন, এখন পা হারিয়ে আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এরকম অসহায় মানুষদের কর্মসংস্থানের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) এনজিও ব্যুরোর উদ্যোগে সংস্থাটির সভাকক্ষে ‘স্বাস্থ্য সেবায় এনজিওর সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এই যে ২১ হাজার ইনজুরড হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৪০ জন দুই চোখই হারিয়েছেন, ওদের ভবিষ্যৎ কী? এরা আমাদেরই সন্তান। আমি যদি নিজের চোখ বন্ধ করে দেখি, আমার চোখ নেই। তাহলে আমার জগৎটাকে কীভাবে দেখবো? কাজেই এই যে একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে তারা যাচ্ছে, তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে।’
এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আহত হয়েছেন, তাদের পড়াশোনা কিংবা কাজের মধ্যে কীভাবে আনা যায়, সে ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করবেন। আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে রিকশা, ভ্যানগাড়ি চালকও রয়েছে, বাকিরা শিক্ষার্থী।’
দেশে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, বাল্যবিয়ে, স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে সরকার সমন্বয় করে কাজ করতে পারে। এনজিওগুলোর সঙ্গে আমরা বিশদভাবে কাজের পরিকল্পনা নিতে পারি। এখন ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুতে আর একজনও মারা যাওয়ার কথা না। তাই জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করার জন্য আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা, বদ্ধ পানি জমে থাকা এসবের বিরুদ্ধে সচেষ্ট হতে হবে। এছাড়া সিগারেট, ই-সিগারেট, তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সংকটও রয়েছে। সরকার একদিনে সবকিছু করতে হয়তো পারবে না। কিন্তু আমরা যদি পারস্পারিক সহযোগিতায় পথটা তৈরি করে দিতে পারি, তাহলে দেশটা এগিয়ে যাবে।’
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। এছাড়া এতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে এমন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।