বটগাছের নিচে সন্তান লাভের আশায় আঁচল পেতে বসেছেন নারীরা

নাটোর প্রতিনিধি
কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের অন্ধবিশ্বাসের বিষয়টি নতুন নয়। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় বিভিন্ন আবিষ্কার আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এই অন্ধবিশ্বাস কমাতে সহায়তা করলেও এখনও গ্রাম বাংলায় রয়েছে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ব্যাপক প্রচলন। তেমনি এক অন্ধবিশ্বাস হলো বটবৃক্ষের তলে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের আশায় ভিখ!
ভিখ মানে ভিক্ষা। ভক্তদের বিশ্বাস নিঃসন্তান বন্ধ্যা মহিলারা আশ্রমের অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য ভিখ মাগবেন। তাদের বিশ্বাস, যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ওপর পড়ে তাহলে নিঃসন্তান নারী সন্তান লাভ করবে। নাটোরের
লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোঁসাইজীর আশ্রমে এই দৃশ্য চলছে।নাটোরের লালপুরে গোঁসাইজীর আশ্রমে সন্তান লাভের আশায় বটগাছের নিচে আচল পেতে পার্থনায় বসে আছেন নারীরা। বটগাছ থেকে ফল বা পাতা পড়লেই নিঃসন্তান নারীরা লাভ করবেন সন্তান। এমন বিশ্বাস থেকে তারা সদ্য ¯œন শেষে ভেজা কাপড়ে বটগাছের নিচে আঁচল পেতে সন্তান লাভের আশায় প্রার্থনা করছিলেন। তাদের বিশ্বাস, গাছের ফল বা পাতা যদি তাদের আঁচলে পড়ে, তবে তারা সন্তান লাভ করবেন। মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দিনব্যাপী চলা নবান্ন উৎসবে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বটগাছের নিচে কয়েকজন নারী রঙিন শাড়ির আঁচল পেতে গাছ থেকে পাতা বা ফল পড়ার অপেক্ষায় আছেন। আশ্রমের এক নারী বৈষ্ণব তাদের দেখভাল করছেন। তাদের এমন কর্মকান্ড দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিঃসন্তান নারীরা নবান্ন উৎসবে এসে সন্তান লাভের আশায় ভিড় করেন।
এ বিষয়ে এক নারী জানান, অনেকের মুখে শুনেছি আঁচল বিছিয়ে মানত করলে সন্তান হয়। তাই আমি এখানে এসেছি, যাতে আমারও সন্তান লাভ হয়।
কুমিল্লা থেকে আসা এক নারী জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমার সন্তান হয়নি। বহু চিকিৎসা করেও কিছু হয়নি। এরপর আমি এখানে আসি, কারণ আমার ননদ এখানে এসে সন্তান লাভ করেছেন।
আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার জানান, নবান্ন উৎসবে নিঃসস্তান নারীরা মানত করেন, পরে ভক্তদের কলাপাতা দিয়ে খিচুড়ি প্রসাদ হিসেবে খাওয়ানো হয়। বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দূড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসি পাড়া গ্রামে গহীন অরণ্যের একটি বটবৃক্ষের নিচে আস্তানা করেন শ্রী ফকির চন্দ্র বৈষ্ণব। এখান থেকে সাধু ধ্যান তাপস্য ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমা গঙ্গাøান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে হাজারো ভক্তবৃন্দ, দর্শনার্থী ও সাধকরা উপস্থিত হন।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে নিঃসন্তান নারীরা সন্তাান লাভের আশায় অক্ষয় বটবৃক্ষের তলে আঁচল পেতে বসে থাকেন। যাদের আঁচলে বৃক্ষের পাতা পড়ে তারা কন্য সন্তান ও ফল পড়লে পুত্র সন্তান লাভ করেন।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম শাহাবুদ্দিন জানান, এভাবে সন্তান লাভ করা অসম্ভব। এমন প্রার্থনা হচ্ছে কুসংস্কার। বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর কোনো ভিত্তি নেই।