আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সারাদিন বিভিন্ন কাজের জন্য চোখকে রাখতে হয় কম্পিউটার ও মোবাইলের স্ক্রিনে। স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকায় চোখের উপর পড়ছে তীব্র চাপ। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিন দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকলে চোখ লাল হয়ে পানি পড়ে, চোখ ব্যথার সঙ্গে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া ভাব থাকে।
এছাড়া মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে ক্লান্তি বোধ করা, ঝাপসা দেখা বা মাঝে মধ্যে দুটি দেখা, ফোকাস নষ্ট হওয়ার, কপাল-ঘাড়-পিঠজুড়ে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যার নাম ‘সিভিএস’ অর্থাৎ কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম। অন্ধকারে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পিসি বা টিভি ব্যবহার করলে এর নীল আলো সরাসরি চোখের ওপর পড়ে। ফলে রেটিনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়।
এমনকি মিনিটে যত বার শ্বাস চলে ততবার চোখের পলক পড়ার কথা। মিনিতে ১৮ বারের বদলে ৫-৯ বার চোখের পলক পড়ে ফলে চোখ শুকোতে থাকে। যাকে বলে ‘ড্রাই আই সিনড্রোম। তবে মিনিটে ১৮ বার পলক ফেললে কিছু তৈলাক্ত ও জলীয় পদার্থ সমান ভাবে মণির উপর ছড়িয়ে পড়ে যা চোখকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারে।
দীর্ঘ সময় কাজ করলে চোখের মণিকে ক্রমাগত স্ক্রিনের চারপাশে ঘোরাতে থাকে ফলে পেশীতে চাপ পড়ে। এতে ক্লান্ত হয় চোখ। যাদের চোখে খুব বেশি মাইনাস পাওয়ার আছে, তাদের বেশি সমস্যা হয়। চশমা না পরে কাজ করলে এই সমস্যা বাড়ে। তাই কম্পিউটার ও মোবাইল প্রতিনিয়ত ব্যবহার করলে অবশ্যই চোখের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি চশমা পড়তে হবে। যে ভাবে চোখের যত্ন নিবেন:
যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তাদের প্রতিবছর অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
কম্পিউটার স্ক্রিনে পড়ার জন্য খুব ছোট ফন্ট ব্যবহার করবেন না। চোখের কষ্ট হয় এমন ফন্ট বাদ দিয়ে চোখের জন্য আরামদায়ক ফন্ট নির্বাচন করুন।
স্ক্রিনে বেশি সময় তাকালে চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাই। কম্পিউটারে কাজের সময় নিয়মিত বিরতিতে চোখের পলক ফেললে চোখে ময়েশ্চার তৈরি হয় যা চোখের শুষ্কতা দূর করে।
চোখ সুরক্ষার জন্য একটি নিয়ম হচ্ছে ২০-২০-২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পর পর, ২০ ফুট দূরত্বের কোনো জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হয়। এতে চোখে যথেষ্ট আর্দ্রতা থাকে এবং চোখের ওপর চাপ কমে।
কম্পিউটারের মনিটরের অ্যান্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। যা ঘরের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কম্পিউটার মনিটরের আলো কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। তাই কম্পিউটার ও মোবাইলের স্ক্রিন যেন অতিরিক্ত উজ্জ্বল না হয় সেজন্য আলো কমিয়ে রাখুন।
যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য কম্পিউটারের স্ক্রিন বা মোবাইলের সামনে বসে থাকতে হয় তাহলে এমন লেন্স ব্যবহার করা উচিত যা নীল রশ্মি দূর করতে সক্ষম। এর জন্য অ্যান্টি গ্লেয়ার গ্লাস ভালো বিকল্প।
কাজের ফাঁকে কিছু হালকা চোখের ব্যায়াম করতে পারেন। চোখের মণি উপরে নিচে আর পাশে ধীরে ধীরে রোল করার মতো করে ঘোরান। চোখ আরাম পাবে।
মাঝে মাঝে চোখে পানির ঝাপটা দিন। সারাদিনে ১০ থেকে ১৫ বার চোখে পানির ঝাপটা দিন। তাতে চোখ ঠাণ্ডা থাকে। চোখ আর্দ্র হয় ও রক্তসঞ্চালন বাড়ে। তবে একদম ঠাণ্ডা বা মাত্রাতিরিক্ত গরম পানি দেবেন না চোখে।
কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে মোটামুটি ২৫ থেকে ২৬ ইঞ্চি—বা কমপক্ষে এক হাত পরিমাণ দূরত্বে চোখ রাখুন। স্ক্রিন যেন চোখের ঠিক সমান জায়গায় থাকে। স্ক্রিনের রং (কালার-কন্ট্রাস্ট) এবং আলো মাঝারি অবস্থানে রাখুন, যাতে খুব অন্ধকার বা খুব বেশি আলো না হয়। চোখ থেকে দূরে রেখে মোবাইল ব্যবহার করুন।
পিসি বা ল্যাপটপের স্ক্রিনটি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। কেননা স্ক্রিনে পড়া ধুলা, ময়লা বা অন্য দাগওয়ালা স্ক্রিন দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ‘ক্রনিক হেডেক’ দেখা দিতে পারে।
সারাদিনের কাজের পর অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। খেয়াল রাখুন রাতে ঘুমের আধঘণ্টা আগে ফোন বা ল্যাপটপ বন্ধ করে দিন।
চোখ ভালো রাখতে গাজরের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, কমলালেবু, ছোট মাছ খান। টাটকা শাক-সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। যা চোখের কর্নিয়া ভালো রাখতে সাহায্য করে।