যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত নথি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠার বিশাল এ নথি মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) প্রকাশ করবে ট্রাম্প প্রশাসন। গতকাল সোমবার কেনেডি সেন্টারে এক ভাষণে এ ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কেনেডি সেন্টারের ওই ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করতে যাচ্ছি আমরা। আমরা কোনো কিছু গোপন করব না।’
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাসে নিহত হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। কেনেডিকে গুলি করে হত্যার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন লী হার্ভি অসওয়াল্ড নামে এক মার্কিন নাগরিক, যিনি কিছুকাল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করেছিলেন।
কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ১৯৬৪ সালে মার্কিন সরকারের নিযুক্ত ওয়ারেন কমিশন বলেছিল, এই হত্যাকাণ্ড অসওয়াল্ড একাই ঘটিয়েছেন। তবে গ্রেফতার হওয়ার দুদিনের মাথায় অসওয়াল্ড ডালাসে পুলিশ সদর দপ্তরের বেজমেন্টে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। এতে কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দশকের পর দশক ধরে নানান ষড়যন্ত্রের কথা প্রচলিত রয়েছে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার কেনেডি সেন্টারে এক বক্তৃতায় বলেন, তার প্রশাসন মঙ্গলবার জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রায় ৮০,০০০ পৃষ্ঠার ফাইল প্রকাশ করবে। এই হত্যাকাণ্ড ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উস্কে দিয়েছে। এই প্রকাশনাটিতে ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক কিছু পড়ার থাকবে।
ট্রাম্প বলেন, আমি বিশ্বাস করি না যে সেখানে কিছু সম্পাদনা হয়েছে। আমি বলেছিলাম, কোনো সম্পাদনা করা চলবে না, আমরা সম্পাদনা করতে পারি না। আমরা জেএফকে-র ফাইল প্রকাশ করতে পারি।
ফাইলগুলোতে কী রয়েছে, সেটি দেখেছেন কিনা, জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমি বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছুটা অবগত আছি। এটির প্রকাশ খুব আকর্ষণীয় হতে চলেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যাতে জেএফকে হত্যাকাণ্ডের সমস্ত অবশিষ্ট রেকর্ড, সেইসঙ্গে রবার্ট এফ কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশের ঘোষণা ছিল।
ওই নির্বাহী আদেশের অধীনে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডকে জেএফকে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ফাইলগুলোর ‘পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ প্রকাশ’ করার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ফাইলগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে।
জেএফকের মৃত্যুর পরিস্থিতি কয়েক দশক ধরে মার্কিন সমাজকে রহস্যে রেখেছে। জরিপে দেখা গেছে যে বেশিরভাগ আমেরিকান মামলার আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন।
২০২৩ সালের গ্যালাপ জরিপে, ৬৫ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা জেএফকের মৃত্যুর জন্য গ্রেপ্তার হওয়া হার্ভে অসওয়াল্ড একাই প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছেন বলে ওয়ারেন কমিশনের বক্তব্য মেনে নেননি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশ শতাংশ বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে অসওয়াল্ড মার্কিন সরকারের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছিলেন, অন্যদিকে ১৬ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন অসওয়াল্ড সিআইএয়ের হয়ে কাজ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের সময়, জেএফকে হত্যাকাণ্ডের সমস্ত রেকর্ড প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিআইএ ও এফবিআইর অনুরোধে মাত্র ২,৮০০ নথি প্রকাশ করা হয়।
তারপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে আরও প্রায় ১৭,০০০ টি রেকর্ড প্রকাশ করা হয়, যার ফলে বেশির ভাগ ফাইল আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে আটকে থাকে। কিছু নথি জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল।
মার্কিন জাতীয় আর্কাইভ অনুসারে, কর্তৃপক্ষ ১৯৯২ সালের জেএফকে রেকর্ডস আইন অনুসারে পর্যালোচনা করা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার নথির বেশিভাগই প্রকাশ করেছে। এখন বাকি ৮০ হাজার নথি সম্পূর্ণ প্রকাশ করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন