রানিং স্টাফদের ধর্মঘট : শুনসান নিরবতা ঈশ্বরদী জংশন ষ্টেশনে ২৬ জোড়া (৫২টি) ট্রেন চলাচল বন্ধ

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
রানিং স্টাফদের পার্ট অফ পে রানিং এলাউন্স (মাইলেজ) যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১২টার পর থেকে পশ্বিমাঞ্চল রেলওয়েতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) পশ্চিমাঞ্চল রেলের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে শুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। স্টেশনের প্লাটফর্মে যাত্রীবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ট্রেনের সঙ্গে ইঞ্জিন নেই। স্টেশনে কর্মরত রানিং স্টাফ টিটিই, গার্ড ও ট্রেন চালকদেরা দেখা মেলেনি। সকালের দিকে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য শত শত যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরে গেছেন। স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে অনিবার্য কারণবশত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কথা।

ঈশ্বরদী জংশন ও বাইপাস ষ্টেশনের ওপর দিয়ে ২৬ জোড়া অর্থাৎ ৫২টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। এরমধ্যে ঈশ্বরদী জংশন দিয়ে ১৫ জোড়া ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্ত:নগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, সীমান্ত এক্সপ্রেস, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, পাবনা এক্সপ্রেস ঢালারচর সাটল ও ঈশ্বরদী কমিউটার। এছাড়া মেইল ও লোকাল ট্রেনগুলোর মধ্রে রয়েছে মহানন্দা এক্সপ্রেস, রাজশাহী এক্সপ্রেস, রকেট এক্সপ্রেস, ঢাকা কমিউটার ও ৫৬৩ নম্বর লোকাল ট্রেন।

ঈশ্বরদী বাইপাস ষ্টেশন দিয়ে ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে, আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, ধুমকেতু এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, লালমণি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস।

পাকশী ও লালমণিরহাট বিভাগীয় রেল সূত্র জানায়, উল্লেখিত ট্রেনগুলোর ষ্টার্টিং পয়েন্ট থেকে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি। ২৮ জানুয়ারি যাত্রার জন্য যারা টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারা কাউন্টারে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। আর যারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা অনলাইনের মাধ্যে রিফান্ড করতে পারবেন বলে রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

দুপুরে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী রওশন আলী বলেন, তিন দিন আগে টিকিট সংগ্রহ করেছি। আমি ও আমার মেয়ে গ্রামে যাবো। স্টেশনে এসে শুনছি কোনো ট্রেন চলাচল করছে না। এখন কীভাবে বাড়ি যাবো বুঝে পাচ্ছি না। বাসের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী জংশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সুজন কুমার বলেন, ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল ১.৩০ পর্যন্ত এ স্টেশনের ওপর দিয়ে আজ কোনো ট্রেন ছাড়েনি এবং চলেনি। ঢালারচর এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল, ঈশ্বরদী কমিউটারের সব বগি স্টেশনে রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন স্টেশনে আসেনি। ভোর থেকে শত শত যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের বুকিং সহকারী শামীম আহমেদ বলেন, সকাল থেকে মধুমতি, সাগরদাড়ি, ঈশ্বরদী কমিউটার, চিত্রা, কপোতাক্ষ, সিল্কসিটিসহ বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিচ্ছেন।

রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় আহবায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, শুনেছি এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা আমাদের দাবি মেনে নিলেই আমরা কাজে যোগ দেবো।

রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, মাইলেজ প্রদানসহ সকল দাবি পূরণের জন্য রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও রেল মন্ত্রণালয়কে তিন বছর ধরে আমরা চিঠির মাধ্যমে অবহিত করে আসছি। পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি এবং আমাদের মূল্যায়ন করেননি। তাই রানিং স্টাফরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রেল ভবন ও রেল মন্ত্রণালয় আমাদের ব্যাপারে আজ কী সিদ্ধান্ত নেয় তার জন্য অপেক্ষায় আছি। যদি আমাদের দাবি তারা মেনে নেয় তাহলে আমরা কাজে যোগ দেবো।

preload imagepreload image