অনাবিল ডেস্ক ::
বয়সের চাকা ত্রিশ পার হওয়ার পরই নানা স্বাস্থ্য জটিলতা শরীরে বাসা বাঁধে। অনেকেরই দেখা দেয় ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা। এই সমস্যা হলে বসলে ওঠা যায় না, উঠলে বসতে কষ্ট হয়। ওষুধ খেয়েও সবসময় স্বস্তি মেলে না। চিকিৎসকদের মতে, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নজর দিতে হবে খাদ্যাভ্যাসেও।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা, বিশেষ করে গিটেবাতের মতো ব্যথা হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিডের যন্ত্রণা কমানোর জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলি এড়িয়ে চলা উচিত:
প্রোটিনসমৃদ্ধ লাল মাংস প্রোটিনসমৃদ্ধ লাল মাংস হলো এমন মাংস যা উচ্চমাত্রার প্রোটিন সরবরাহ করে এবং সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার মাংসের মধ্যে পাওয়া যায়। এগুলোতে পিউরিনের পরিমাণ বেশি, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়। তবে বেশি পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত লাল মাংস ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।তাই যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
সামুদ্রিক মাছ ও শেলফিশ সারডিন, ম্যাকারেল, হেরিং, টুনা, চিংড়ি, কাঁকড়া এগুলো পিউরিন সমৃদ্ধ এবং ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যারা উচ্চ ইউরিক এসিড বা গাউটের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের কিছু সামুদ্রিক মাছ ও শেলফিশ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এগুলিতে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। লো-পিউরিন মাছ ইউরিক এসিডের ঝুঁকি কমাতে লো-পিউরিন যুক্ত মাছ (যেমন স্যামন) পরিমিত মাত্রায় খাওয়া যেতে পারে।
অ্যালকোহল খাবার এড়িয়ে চলাবিশেষ করে বিয়ার এবং ওয়াইন এগুলো লিভারে ইউরিক অ্যাসিডের প্রসেসে বাধাগ্রস্ত করে। ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অ্যালকোহল (বিশেষ করে বিয়ার এবং হুইস্কি) শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে গেঁটেবাত বা অন্যান্য সংবেদনশীল ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যালকোহল কিডনি থেকে ইউরিক অ্যাসিড নিঃসরণ কমিয়ে দেয় যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করে ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়।
প্রসেসড খাবারসসেজ, সেলামি, প্যাকেটজাত খাবার এতে থাকা রাসায়নিক উপাদান ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব দোকানজাত বা বাহিরের খাবার এড়িয়ে যেতে হবে না হয় এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মিষ্টি ও ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ খাবারসফট ড্রিঙ্কস, মিষ্টি ফলের জুস, ক্যান্ডি ফ্রুক্টোজ ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায় তাই মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে । কারণ মিষ্টি খাবারে প্রচুর পরিমানে চিনি থাকে যা আমাদের বিভিন্ন সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়।
ডাল ও শিমজাতীয় খাদ্যমসুর, রাজমা, ছোলা, সয়াবিন পিউরিন বেশি থাকার কারণে এগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। ডাল ও শিমজাতীয় খাদ্য (যেমন মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি, সয়াবিন) ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন হলে কিছুটা সীমিত করতে হতে পারে। এসব খাবারে পিউরিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। পিউরিন শরীরে ভেঙে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা অতিরিক্ত হলে গেঁটেবাত বা ইউরিক অ্যাসিড-জনিত অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।তবে, ডাল ও শিমজাতীয় খাদ্যের পুষ্টিগুণও অনেক। তাই সরাসরি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলার পরিবর্তে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত পরিমাণ গ্রহণ করা ভালো। এছাড়া,পর্যাপ্ত পানি পান করা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
স্পাইসি ও তৈলাক্ত খাবার স্পাইসি এবং তৈলাক্ত খাবারগুলি ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে পারে এবং গাউট বা অন্যান্য ইউরিক অ্যাসিড সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এগুলি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে, যা ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাবকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে, স্পাইসি ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া ভালো।
অতিরিক্ত টিপস:পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও বেশি সবুজ শাকসবজি (পালং শাক এড়িয়ে) খান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট প্ল্যান তৈরি করুন।আপনার ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে এগুলো মেনে চললে দ্রুত উপকার পাবেন।